রাজনীতি

আবারও সরকারকে শেষ বার্তা দিতে চায় বিএনপি

পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য শেষবারের মতো সরকারকে কড়া বার্তা দিতে চায় বিএনপি। এজন্য ক্ষমতাসীন দলকে আলটিমেটাম দেবে দলটি। দুর্গাপূজা শেষ হওয়া পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে। আগামীকাল বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে টানা দ্বিতীয় দফার কর্মসূচি। এ জনসমাবেশ থেকেই আলটিমেটাম দেওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে দাবি না মানলে তফশিল পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা দেবে। যা পূজার পর ২৬ অথবা ২৭ অক্টোবর থেকে শুরু হতে পারে।

এছাড়া জনসমাবেশ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হবে।চূড়ান্ত পর্যায়ে বেশিরভাগ কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। ঘেরাও কর্মসূচি দিয়ে এ আন্দোলন শুরু হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের কর্মসূচির ক্ষেত্রেও নীতিনির্ধারকদের প্রস্তাবে রয়েছে। পাশাপাশি সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে। সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে প্রাথমিক একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। যা চূড়ান্ত করবে দলটির হাইকমান্ড। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুর্গাপূজার মধ্যে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। জনগণের দাবি মেনে নিয়ে সরকার পদত্যাগ করবে, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। অন্যথায় আন্দোলনের মধ্য দিয়েই পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। সামনে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আর যদি অন্যায়ভাবে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হামলা, গায়েবি মামলা করা হয় দেশের মানুষ প্রতিরোধ করবে। সেই প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে বিজয় আসবে। এদিকে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে কাল বুধবার নয়াপল্টনের জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি।

এ জনসমাবেশকেও ঐতিহাসিক করতে চায় দলটি। সেজন্য ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের জেলা থেকেও বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মীদের অংশ নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া সোমবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ‘যুব-সমাবেশে’ সারা দেশ থেকে আসা যুবদল নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই ঢাকায় অবস্থান করছে, যারা জনসভায় অংশ নেবে বলে জানা গেছে।বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, বুধবার (কাল) বেলা ২টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসমাবেশ হবে। গত রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশে পুলিশ সার্বিক সহযোগিতা করবে।

একদফা দাবিতে ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে রোডমার্চ ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। যা ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোডমার্চের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। চট্টগ্রামের রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশ থেকে দ্বিতীয় ধাপের টানা কর্মসূচি ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি ঢাকায় জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। ওইদিন বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন, ঢাকার জনসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেই কর্মসূচিই হবে শেষ কর্মসূচি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, জনসভা থেকে তাদের দাবির বিষয়ে সরকারকে আবারও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। দাবি আদায়ে সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে লাগাতার কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বার্তা দেওয়া হতে পারে। যা এর আগেও একাধিকবার বলা হয়েছে। বিএনপি মনে করে বেশিরভাগ কর্মকর্তাই পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করতে চান। যদিও ক্ষুদ্র একটি অংশের কারণে সেটি ব্যাহত হয়েছে। তাই জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় গেলে কী হবে সেটা নিয়ে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না থাকে সেটাই বিএনপি পরিষ্কার করবে।

একই সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি অতীতে যে যাই করুক-এখন থেকে নিরপেক্ষ আচরণ করলে তাদের চাকরির সুরক্ষা বিএনপি ক্ষমতায় এলেও থাকবে-এমন বার্তা দেওয়া হতে পারে। এর উদ্দেশ্য হলো-প্রশাসনের কোনো স্তরেই যেন বিএনপিকে নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ‘অমূলক’ কোনো ভয় বা বিভ্রান্তি না থাকে। এবং একই সঙ্গে সামনের দিনগুলোতেও যেন কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ থাকতে উৎসাহী হন। আগামী ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজার সময়ে বড় কোনো কর্মসূচি রাখবে না বিএনপি। সূত্র মতে, দুর্গাপূজার পরে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে বিএনপির সঙ্গে তার মিত্ররাও মাঠে থাকবে। যুগপদের শরিকরা জানান, চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি হবে লাগাতার এবং রাজধানী ঢাকার ওপর থাকবে আন্দোলনের মূল ফোকাস। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পূজার পর আরও শক্ত কর্মসূচি নিয়ে হাজির হব। এই অবৈধ দখলদার সরকারের মসনদ ভেঙে যাবে। জনগণের দুর্বার আন্দোলনে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে।