11 May 2024 , 1:38:44 প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার এসআই সুদীপ্ত শাহীনের অপেশাদার আচরণ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। দেবিদ্বার পৌর এলাকার মরিচাকান্দা গ্রামের প্রবাসী আক্তার হোসেন পাওনা টাকা আদায়ের জন্য থানায় অভিযোগ করলে উলটো বিপাকে পড়েন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রকাশ্যেই বাদীর (প্রবাসী) কাছে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দাবি করেন।
এমন ভিডিও বাদীর কাছে থেকে পান গণমাধ্যমকর্মীরা; পরে তা ভাইরাল হয়ে যায়।শুক্রবার ঘটনার তদন্ত করতে এসে এসআই সুদীপ্ত শাহীন বাদীকে বলেন, বেশি টাকা দিলে ভালো কাজ পাবি। আর কম টাকা দিলে কম কাজ পাবি। তুই বেশি টাকা না দিলে আমি (এসআই সুদীপ্ত শাহীন) আসামির পক্ষে থাকব। তুই কীভাবে আসামির কাছ থেকে টাকা আদায় করিস তা দেখে নেব।
পুলিশ কর্মকর্তার এমন অপেশাদার আচরণে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।জানা গেছে, উপজেলার মরিচাকান্দা গ্রামের সৌদি প্রবাসী আক্তার হোসেনের কাছ থেকে একই গ্রামের জাকির হোসেন এবং আব্দুল আজিজ তিন শতাংশ জায়গা বিক্রি বাবদ ৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা নেন। পরে প্রতারণা করে তারা জায়গাটি অন্যত্র বিক্রি করে দেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় দফায় দফায় বৈঠক হয়। কিন্তু জাকির গং প্রভাবশালী হওয়ায় বিষয়টি সমাধান করা যায়নি। এরই মধ্যে প্রবাসীর স্ত্রী বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন।
সম্প্রতি আক্তার হোসেন দেশে এসে বৈঠকের আয়োজন করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় আসামিরা। এতে বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার জাকির ও আজিজের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী। এ সময় থানার এসআই সুদীপ্ত শাহীনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।শুক্রবার ওই পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে আসামির সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। পরে মরিচাকান্দা মসজিদ মার্কেটে প্রকাশ্যেই বাদীর কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
স্থানীয়রা জানান, এসআই সুদীপ্ত শাহীন পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার বাসিন্দা। দেবিদ্বার থানা এলাকায় রয়েছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার অনেক পরিচিত লোকজন ও আত্মীয়স্বজন। তিনি দেবিদ্বার থানায় যোগদানের পর এখানে একটি শক্তিশালী বলয় তৈরি করেছেন। যার ফলে তিনি সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে অপেশাদারসুলভ আচরণ করে যাচ্ছেন। তাকে পৌর এলাকার ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের বিট পুলিশিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে ওই পুলিশ কর্মকর্তার আচরণে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও ভয়ে কেউ অভিযোগ করতে রাজি হননি।ভুক্তভোগী প্রবাসী আক্তার হোসেন বলেন, অভিযোগের পর এসআই সুদীপ্ত শাহীন আমাকে থানায় ডাকেন। আমি দেশের নিয়মকানুন বুঝি না, তাই আমার এক ছোট ভাইকে নিয়ে ওনার সঙ্গে দেখা করতে যাই। তিনি (এসআই) আমাকে বলেন, মোটা অংকের টাকা দিতে পারবি? তা হলে আসামিকে ধরে এনে টাকা আদায় করে দেব। আর কাউকে দিয়ে তদবির করাইলে তোর বিরুদ্ধে কাজ করব।
শুক্রবার ঘটনাস্থলে এসে তিনি আসামি জাকিরের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। পরে আমাকে ডেকে খরচ চাইলে আমি দুই হাজার টাকা দিই। এসআই বলেন, যেমন টাকা দিবি তেমন কাজ পাবি। আসামি বেশি টাকা দিলে আমি আসামির পক্ষে কাজ করব। যে বেশি দেবে আমি তার পক্ষেই কাজ করব। এ ক্ষেত্রে বাদী-আসামি চিনি না। কাউকে দিয়ে তদবির করাইলে তোর (বাদীর) খবর আছে।অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই সুদীপ্ত শাহীন বলেন, আমি ওই প্রবাসীর কাছ থেকে কোনো টাকাপয়সা নিইনি এবং দাবিও করিনি।
তা ছাড়া আসামির সঙ্গে গোপন বৈঠকের বিষয়টিও সঠিক নয়।দেবিদ্বার থানার ওসি নয়ন মিয়া বলেন, অপেশাদার আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভুক্তভোগী প্রবাসীর কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।