সারা দেশ

পাম বাগানে আনোয়ারের সফলতা

পাম বাগানে আনোয়ারের সফলতা

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কুল্লাব গ্রামের জালালউদ্দিন ফকিরের ছেলে আনোয়ার ইসলাম ফকির প্রায় ১০ একর জমিতে পাম বাগান করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন।জানা যায়, ১৯৯৮ সালে আনোয়ার সৌদি আরবে থাকার সময় সেখানকার টিভিতে পাম বাগানের প্রতিবেদন দেখেন তিনি। তখনই পাম গাছের বাগান করার আগ্রহ তৈরি হয় তার।

দীর্ঘ ১২ বছর সৌদিতে কাটিয়ে ২০১১ সালে দেশে ফিরেন তিনি। ওই বছরই নিজের আবাদী ও অন্যের কিছু জমি ভাড়া নিয়ে প্রায় ১০ একর জমিতে চাষ করেন পামগাছের। সাড়ে ৩ বছর পর তার ওই বাগানের পামগাছে ফল ধরতে শুরু করে। প্রথম বছর ৮শ গাছের ফল বিক্রি করে পান ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। এরপর ৯ বছর ধরে তিনি একাধারে পামফল বিক্রি করে চলেছেন।

উদ্যোক্তা আনোয়ার ইসলাম ফকির বলেন, ২০১১ সালে দেশে এসে মনস্থির করেন তিনি নিজের আবাদী জমিতে পামগাছ চাষ করবেন। পরে তিনি অনুসন্ধান করতে থাকেন কোথায় এই চারা পাওয়া যাবে। এরপর তিনি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল এলাকার মাসুদের নার্সারি থেকে প্রতি চারা সাড়ে ৩শত টাকা মূল্য ৮শত টাকা সংগ্রহ করি। পরে ৩০ফুট অন্তর অন্তর দূরত্বে গর্ত করে তাতে গোবর, সার ও মাটি দিয়ে ১৫ দিন পর্যন্ত রেখে চারা রোপন করি। এরপর শ্রমিক দিয়ে চারায় পানি দেওয়া, বেড়া দেওয়া, বাগানের ঘাস বাছা এবং গাছের পরিচর্যা করতে থাকি।

দিনে দিনে গাছ বড় হতে থাকে এবং সাড়ে তিন বছর পর আমার পামগাছে ফল দিতে শুরু করে। বছর জুড়ে ফলন আসে গাছে। একেকটা গাছে ১২টি করে কাদি আসে। আর ১২টি কাদি ১২ মাসে কাটতে হয়। সাড়ে তিন বছর পর প্রতিটি কাদিতে ফল আসবে ১০ থেকে ১২ কেজি। গাছ যখন পূর্ণাঙ্গ বড় হবে তখন প্রতিটি কাঁদিতে ফলের বাধার ওজন হবে ৪০ থেকে ৫০ কেজি। পূর্ণাঙ্গ বড় একটি গাছে প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার ফলন পাওয়া যাবে। তবে আমি সেভাবে ফলন পাইনি। কারণ আমি অন্য ভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাগানের তেমন পরিচর্যা করতে পারি নাই।

ফলে বছরে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার ফলন পাচ্ছি। প্রতিটি পামগাছ ৪০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। এরপর কেটে সেখানে আবারও নতুন চারা রোপন করতে হয়। বাগানটি করতে সব মিলিয়ে আমার প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। কয়েক বছরেই আমি কাছাকাছি টাকা উঠিয়ে নিয়েছি। তবে ভালভাবে পরিচর্যা করতে পারলে ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই বাগানের খরচ উঠানো সম্ভব।তিনি আরও বলেন, পামওয়েলের তেলে কোলেস্টোরেল নেই। এটি মানবদেহে মারাত্মক উপকারী।

পৃথিবীতে যত গাছপালা আছে তার চেয়ে ২৫ভাগ অক্সিজেন দেয় এই পামগাছ। তাছাড়া আমাদের দেশে তেলের ঘাটতি তো রয়েছে। এই বাগান করতে পারলে যদি তেলের ঘাটতি কিছুটা পূরণ করা যায় সেই লক্ষ্য নিয়েই এই গাছ লাগাই।প্রতিবেশি রিটন তালুকদার জানান, উদ্যোক্তা আনোয়ার ইসলামের পামগাছের বাগানটি সম্ভাবনাময়। এর চাষ সম্পর্কে আমরা কেউ জানতাম না। আনোয়ার ইসলাম যখন বাগানটি করে আমরা তাকে উৎসাহ দিয়েছি। তাছাড়া বহুলোক আসে এই বাগানটি দেখতে। ইতোমধ্যে তিনি অনেক টাকার পাম ফল বিক্রিও করেছেন।

পাম বাগানের শ্রমিক মজিদ মিয়া জানান, পামগাছে উপরে কিছু করতে হয় না। নিচে সেচ দিতে হয়। মাঝে মাঝে ডাটা মরে গেরে কেটে দিতে হয়। মেশিন দিয়ে গোড়ায় পানি ও সার দিতে হয়। বাধা বের হলে তিন মাসের মধ্যে ফল কাটা হয়।উদ্যোক্তা আনোয়ার আরও বলেন, নিজের মেশিন না থাকায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর এলাকার রফিকের কাছে পাম ফল ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। সে বাগান থেকে পামফল নিয়ে যান। পাম ফল থেকে তেল, এর উচ্ছিষ্ট থেকে গরুর খাদ্য, পাম ফলের খোলস থেকে কম্পিউটারের কালি তৈরি এবং ভিতরের মাইস বা কোষ থেকে কনডেন্সমিল্ক তৈরি করা হয়। এছাড়া ফার্মাসিউটিক্যালের কাজেও এই পামওয়েল ব্যবহার হয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, এ যাবত তিনি পাম বাগান থেকে ৩০ লাখ টাকার পাম ফল বিক্রি করেছেন। বাগানে প্রায় ১০ কাঠা জমির মধ্যে দেড় একর জমি লিজ নেওয়া তার। প্রতিবছর লিজ নেওয়া জমির প্রতিকাঠার ভাড়া দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। প্রথম থেকে এই বাগানে ১০ থেকে ১২জন শ্রমিক কাজ করতো। ৩/৪ বছর পর শ্রমিক কম লাগছে। এখন আগের মতো শ্রমিক না লাগলেও গাছে বিষ-কীটনাশক দিতে কয়েকজন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। সিনজেন্টার কোম্পানী সবিকন নামে একটি কীটনাশক দেন গাছে।

জৈব সার বেশি ব্যবহার করা হয় ও অন্যান্য সার পরিমাণ মতো ব্যবহার করেন তিনি। পামগাছে এক ধরনের মাজরাকীরায় আক্রমন করে। এই কীরা গাছের ভেতরের মাইজ খেয়ে ফেললে গাছটি মারা যায়। এজন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। অর্থনৈতিক ঘাটতির কারণে তিনি প্রয়োজনীয় শ্রমিক লাগাতে পারছেন না। এখন তার ওখানে ২ থেকে ৩জন শ্রমিক কাজ করে।উদ্যোক্তা আনোয়ার বলেন, আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হল আমি অর্থনৈতিক ভাবে যদি ঘুরে দাঁড়াতে পারি তাহলে এই বাগানে পামগাছের চারাও উৎপান করবেন এবং মানুষকে চারা রোপনে উদ্বুদ্ধ করবেন।

পাশাপাশি একটি মেশিন কিনে যদি পামওয়েল বের করি, তাহলে মানুষ দেখবে যে সত্যিই এটি একটি সম্পদ। সকলেই বুঝে যাবে যে পাম বাগান করলে এখানে মেশিনে মাড়াই করা যাবে। এ থেকে আশপাশের অনেকে এই পাম বাগান করতে আগ্রহী হবে।তিনি বলেন, অনেক আগে ভালুকা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা এসেছিলেন। তিনি বেশ উৎসাহ দিয়েছেন আমাকে। এখন কেউ আসেনা। সরকারি ভাবে সার বা কীটনাশক পাইনা।

এ পাম চাষ সম্পর্কে কৃষি কর্মকর্তারাই ঠিক মতো জানার কথা না। আমি করতে গিয়ে শিখে গেছি। তিনি আরও বলেন, যাদের পতিত জমি রয়েছে তারা যদি পাম বাগান করেন তাহলে অনেক ফলন পাওয়া যাবে এটি যেমনি দেশের তেলের ঘাটতি পুরণ হবে, অন্য দিকে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে এর মাধ্যমে।