9 September 2023 , 4:14:58 প্রিন্ট সংস্করণ
ভূমিষ্ট হওয়ার আগে গর্ভের শিশুর জন্যই যদি সব সঞ্চয় ব্যয় হয়, তাহলে জন্মের পর কী খাওয়াবেন? সন্তানকে সুস্থ-সবল করতে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে পারবেন?… এমন প্রশ্ন আসলে নতুন পত্রিকা ঘিরে। যেখানে বাজারে ছাড়ার আগে প্রস্তুতিপর্বেই খরচের খাতায় বিপুল অর্থ যোগ করছে বিগ বাজেটের কিছু পত্রিকা।
আর জনপ্রিয়তার পরীক্ষায় বসার মাস কয়েকের মধ্যেই কর্তৃপক্ষের ব্যয় কমানোর নির্দেশে গণহারে সংবাদকর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে।সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকার আগমনবার্তা আশার আলো দেখালেও দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না। নতুন জার্নি কীভাবে কেমন হবে, হঠাৎ ছাঁটাই হবো না তো- এমন টেনশন নিয়েই অনেকে যুক্ত হচ্ছেন নতুন পত্রিকায়।
আগে পত্রিকার নিউজ ম্যানেজমেন্ট টিম হতো বিভিন্ন পত্রিকার মেধাবী, সুদক্ষদের আমন্ত্রণ জানিয়ে। আর এখন হয় বসের নিজস্ব নেটওয়ার্কে একান্ত লোকজন নিয়ে। যাদের অনেকে ‘জি ভাই’, হ্যাঁ ভাই, ‘একদম পারফেক্ট’, ‘অসাধারণ ট্রিটমেন্ট’- এমন শব্দযুগল উচ্চারণে সুদক্ষ।বলতে কি, দেড়-দুই দশক আগেও নতুন পত্রিকার আগমনে পাঠক বিশুদ্ধ কৌতুহলে জানতে চাইতেন সম্পাদক কে, পত্রিকার নাম কী?
আর এখন প্রশ্ন- কোন কোম্পানির পত্রিকা? মালিক কে? কোন রাজনৈতিক দলের? কার পারপাস সার্ভ করতে কত কোটি বাজেট?… এক্ষেত্রে কে সম্পাদক, পত্রিকার নাম নিয়ে কৌতুহল সীমিত। এখন টিকে থাকার একমাত্র লক্ষ্য- বেশি প্রচার সংখ্যা দেখিয়ে বিজ্ঞাপনের বেশি রেট বাগিয়ে নেয়া। আর এ কাজে যারা সুদক্ষ তারাই থাকেন নিয়োগ তালিকার প্রথমভাগে।
নিউজটিম সাজানো, ঢাউস আগমনীবার্তা প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্তদের পোস্টের ঢলে ‘আমপাঠকদের’ প্রত্যাশার পারদ উল্লম্ফন দিতে থাকলেও নিউজ পরিকল্পনা চাপা পড়ে যায় প্রি-ব্রান্ডিং ঝড়ে। অনুসন্ধানী, বিশ্লেষণী, এক্সক্লুসিভ বা স্কুপ নিউজ নিয়ে ভাবনার প্রয়াস থাকেই না। অবশ্য এর মধ্যেই বেতন হালাল করতে অতিউৎসাহী কেউ কেউ মাইক্রোস্কোপ নিয়ে বসে যান ‘ভূমিধস’ নিউজ আইডিয়ার সন্ধানে।
মাস কয়েকের অশেষ প্রস্তুতিপর্বের এক পর্যায়ে অতিরিক্ত প্রসব বেদনায় নতুন পত্রিকার উদ্বোধনী সংখ্যা বাজারে আছড়ে পড়তে বাধ্য হয়। তবে অতীতের চর্বিত চর্বণ ‘উদ্বোধনী লিড’ দেখে দেখে ক্লান্ত পাঠকের চমকে ওঠার শক্তি আর থাকে না। পাঠক বুঝতে পারেন, মালামাল আগেরই, শুধু প্যাকেটটাই নতুন! এর মধ্যে নতুন পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ হওয়ার পর নির্ভেজাল পাঠকের স্বপ্নও ভেঙে যায়। মুখ ফিরিয়ে নেন তারা।
মূলত, রাজনৈতিক বিশেষ সুবিধা লাভে উদগ্রীব পত্রিকার জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কোনো তাগিদ থাকে না। উদ্বোধনী সংখ্যা পর্যন্ত অর্জিত ব্রান্ডিংই অনেকের আসল পুঁজি হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তী পরিচালনা ব্যয় কমাতে তাই কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো নির্দয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তৎপর হতে হয় নিউজবসদের। এমন পরিস্থিতিতে নতুন পত্রিকা আশার আলোর সঙ্গে দুশ্চিন্তাও বাড়িয়ে দেয়।