সারা দেশ

লবনপানিতে ১৩ একর জমির তরমুজ নস্ট

লবনপানিতে ১৩ একর জমির তরমুজ নস্ট

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে এক কৃষকের সাড়ে ১৩ একর (২০ বিঘা) তরমুজ ফসলী ক্ষেতে লবন পানি প্রবেশ করে ৪৪ হাজার তরমুজের চারা গাছ মারা গেছে। কৃষকের কোটি টাকার স্বপ্ন এখন বিলীন, অপুরনীয় ক্ষতিতে দিশেহারা ওই কৃষক পরিবার। অসাধু মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে স্লুইজ গেট থেকে লবন পানি প্রবেশ বন্ধের দাবী স্থানীয় কৃষকদের। সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা তেলিগাতী ইউনিয়নের তেলিগাতী গ্রামের কৃষক আবুল বাশার হাওলাদার তার পতিত ২০ বিঘা জমিতে এ বছর প্রথম তরমুজ বীজ বপন করেন।

দেশী আমন ধান ঘরে তোলার পরে ৮ মাস ফসলী মাঠ থাকে পরে, সেই জমিতে তারই এক বন্ধুর পরামর্শে বাংলালিংক ও ম্যাংগোলা দু প্রজাতের তরমুজ বীজ বপন করে স্বল্প সময়ে ৩ মাসে তরমুজ ফলন ফলিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারবে। বীজ বপনের ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিটি গাছে ফলন আসবে এমন উন্নত জাতের তরমুজ ওই এলাকায় তিনি প্রথম উৎপাদন করতে যাচ্ছেন। ৬৪ হাজার তরমুজের চারা তার গোটা ফসলী মাঠ জুড়ে, প্রতিটি গাছের ডগায় তরমুজ ফল কেবলমাত্র ধরেছে। অনেক গাছে তরমুজ ফল সর্বোচ্চ ৫শ’ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে।

হঠাৎ করে স্লুইজ গেট থেকে খালে লবন পানি প্রবেশ করায় সেই পানি থেকে তরমুজ মাঠে সেচ দিবার কারনে কৃষকের গত ১ সপ্তাহ ধরে প্রতিনিয়ত গাছ মরে গিয়ে অর্ধেক বেঁচে আছে। অবশেষে ফসলী মাঠে রয়েছে মাত্র ২০ হাজার গাছ। স্থানীয় মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে রাতের আধারে স্লুইজ গেটের মূল ফটক তুলে পানি তোলার অভিযোগ করেন তিনি।কৃষক আবুল বাশার হাওলাদার তরমুজ ফসলী মাঠে দাড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, বিভিন্ন এনজিও এবং মানুষের কাছ থেকে দাদনে টাকা এনে তরমুজ ক্ষেতে ফসল উৎপাদনের জন্য এ পর্যন্ত সার, ওষুধ ও শ্রমিকসহ প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ৫ জন শ্রমিকের নিয়মিত মাঠে পরিচর্যার জন্য তাদের জনপ্রতি প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা করে বেতন দিয়ে আসছে।

আর মাত্র দেড় মাস পরে ১ লাখ ২৮ হাজার তরমুজ ফল বাজারজাত করতে পারতো। এতে তার ঘরে আসতো প্রায় কোটি টাকা, এ অপরুনীয় ক্ষতি কিভাবে পুশিয়ে উঠবে তার জানা নেই। তবুও হাল ছাড়েনি তিনি, নতুন করে বাঁচার জন্য পুনরায় ৬ বিঘা জমিতে আমেরিকান প্রজাতির সাম্মাম বীজ বপন করে চারার বয়সও ২০ দিন হয়ে গেছে। এ কৃষক কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে বিনামূল্যে সেচ পাম্পের মেশিনের দাবী জানান। মিষ্টি পানির সেচ দিতে পারলে ফলন ভাল আসলে কিছুটা ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদা আক্তার বলেন হেরমা স্লুইজ গেটের চাবি তার পরিষদে থাকে, পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে।

গোপনে বা যখন-তখন পানি উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই, তবে মূল গেটের উপর থেকে অতিরিক্ত জোয়ারে অনেক সময় পানি প্রবেশ করে। বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে একাধীকবার জানানো হয়েছে।এ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আকাশ বৈরাগী বলেন, তেলিগাতী গ্রামের তরমুজ চাষী আবুল বাশার হাওলাদারের লবন পানির কারনে ক্ষতির বিষয়টি সরজমিনে দেখা হয়েছে। ওই কৃষককে একটি সেচ পাম্প মেশিন বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে। স্লুইজ গেট থেকে যাতে করে লবন পানি প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতণ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে।