সারা দেশ

এবার গোপনে ভোটের মাঠে বিএনপি

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও দলের সাবেক দুই নেতা মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ২০২২ সালে কুসিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন তারা। সাক্কু ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আর কায়সার কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি।

দলের নেতারা বলছেন, বহিষ্কারের ভয়ে এই দুই নেতার অনুসারীরা এবারের উপনির্বাচনে প্রকাশ্যে না থাকলেও গোপনে রয়েছেন ভোটের মাঠে।২০১২ সালে কুসিকের প্রথম নির্বাচনে তৎকালীন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার প্রার্থী প্রয়াত অ্যাডভোকেট আফজল খানকে হারিয়ে জয়ী হন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তখন সাক্কুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে অবশ্য তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেয় বিএনপি।

২০১৭ সালে কুসিকের দ্বিতীয় নির্বাচনে সাক্কু ধানের শীষ প্রতীকে আফজল খানের মেয়ে ও নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে হারিয়ে আবারও মেয়র নির্বাচিত হন। এর পর ২০২২ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাত্র ৩৪৩ ভোটে নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে পরাজিত হন সাক্কু। এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার পান ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।

অনেকেই বলেন, কুমিল্লা সদর আসনে আওয়ামী লীগের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সঙ্গে সখ্যতার কারণে কুসিকের প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনে জয়ী হন সাক্কু। ২০২২ সালের নির্বাচনে সাক্কুর ওপর সেই ‘আশীর্বাদ’ ছিল না বলে তিনি হেরে গেছেন। তবে সমকালকে সাক্কু বলেন, ‘ওই নির্বাচনে কারচুপি করে আমাকে হারানো হয়েছে, যা বিশ্ববাসী টিভিতে দেখেছে।

এবারের উপনির্বাচনেও সাক্কু-নিজাম প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির ভোট ভাগাভাগি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিজাম উদ্দিন কায়সার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক। দলীয় সূত্র বলছে, হাজী ইয়াছিন ও মনিরুল হক সাক্কুর নেতৃত্বে কুমিল্লা নগরীতে বিএনপির দুটি গ্রুপ রয়েছে। সে কারণেই ভোট ভাগাভাগি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাক্কু-নিজামের মধ্যে সমঝোতা হচ্ছে কিনা– এমন প্রশ্নে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘এবারের ভাঙা (উপনির্বাচন) নির্বাচনে আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য কায়সারকে বলেছিলাম। একটি মাধ্যমে হাজী ইয়াছিনকে অনুরোধ করেছিলাম সমঝোতা করতে, কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত জানায়নি।এ বিষয়ে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘দুর্নীতি ও লুটপাট করতে মেয়র হতে চাচ্ছি না। আধুনিক কুমিল্লা সিটি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছি।

সর্বস্তরের ভোটারদের সমর্থনে বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।’ তিনি বলেন, ‘সাক্কু ভাইয়ের সঙ্গে কোনো সমঝোতার কথা আমার জানা নেই।এদিকে বিএনপির সাবেক এ দুই নেতার ভোট ভাগাভাগির সমীকরণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনার জন্য এটিকে ইতিবাচক মনে করছেন।

ডা. সূচনা সদর আসনের চারবারের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিনের বড় মেয়ে। এ ছাড়া এখানে প্রার্থী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান (তানিম)।বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) মোস্তাক মিয়া সমকালকে বলেন, ‘মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার দল থেকে বহিষ্কৃত। ওই বহিষ্কারাদেশ এখনও প্রত্যাহার হয়নি।

উপনির্বাচনে তাদের পক্ষে দলের কেউ প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামলে কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কুসিক মেয়র আরফানুল হক রিফাত। নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী, ওই পদে আগামী ৯ মার্চ ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে।

আরও খবর

Sponsered content

%d bloggers like this: