18 February 2024 , 2:03:13 প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহীতে অজানা এক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই বোনের মৃত্যুর পর এবার তাদের বাবা-মাকেও আইসোলেশন রাখা হয়েছে। গৃহকর্মীর আনা গাছ থেকে পাড়া বরই খাওয়ার পর অসুস্থ হয় দুই বোন। চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, গাছ থেকে পাড়া বরই না ধুয়ে খাওয়ায় তাদের শরীরে নিপাহ ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে। আর এতেই তাদের মৃত্যু হতে পারে।
দুই বোন মুনতাহা মারিশা (২), মুফতাউল মাশিয়া (৫)। তাদের বাবা মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। মা পলি খাতুন (৩০) গৃহিনী। এই দুই শিশুর বাবার বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।
রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের আইসোলেশন সেন্টারে থাকা মনজুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুন জানান, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কোয়ার্টারের কাজের বুয়া কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। এর পরদিন বুধবার দুপুরে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে।
এরপর পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ খায়। শহরে ঢোকার আগে কাটাখালী এলাকায় মায়ের বুকেই মারিশা মারা যায়। সিএমএইচে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, সে মারা গেছে। এরপর গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুরে নিয়ে মরদেহ দাফন করা হয়।
এরপর শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুর্গাপুরের বাড়িতে মাশিয়ারও জ্বর আসে। শুরু হয় বমি। দ্রুতই তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহীতে সিএমএইচে নেওয়া হয়। রাতে মাশিয়ারও পুরো শরীরে ছোটো ছোটো কাল দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুতই আইসিইউতে ভর্তি করান। পরদিন শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়।এদিকে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে দুই শিশুর বাবা–মাকে হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকেরা। তাদের রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। আর বিকেলে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়।
সন্ধ্যার পরে দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। গত বুধবার রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও একই স্থানে দাফন করা হয়েছে।রামেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বাচ্চা দুটি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল।
দিও তাদের বাবা-মা জানিয়েছেন, তারা খেজুর রস খায়নি। তবে না ধুয়ে বরই খেয়েছিল। এটা থেকে নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোনো ভাইরাসও হতে পারে। সেটা আসলেই কী তা জানতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মারিশা আর তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রোববার রিপোর্ট পেয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।