সারা দেশ

ময়লার ভাগাড় এখন মাদকের আস্তানা জনদুর্ভোগ চরমে এলাকা বাসি

বরিশাল নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পুরান পাড়ায় বিশাল ময়লার ভাগাড় এখন এলাকাবাসীর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যেমন ময়লার গন্ধ অন্যদিকে মাদককের একটি বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি হয়েছে ঐ ভাগারে। ফলে ওয়ার্ডবাসীর দুর্ভোগ এখন তুঙ্গে। দুর্ভোগ এতটাই চরমে গিয়ে পৌঁছেছে যে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া করে থাকছেন। বরিশাল নগরীর পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলেও এই শহরে তেমন কোন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন হয়নি।

নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ড পুরানপাড়া এলাকাটির এখন নামই হয়েছে ‘ময়লাখোলা’। কারন গোটা নগরের বর্জ্য এখন ফেলা হচ্ছে এই ওয়ার্ডের একটি বিশাল স্থানজুড়ে। উন্মুক্ত ডাম্পিং স্টেশন চালুর পর ময়লার গন্ধে পুরানপাড়াসহ সরদারকান্দা, রাঢ়িমহল, শ্রীপুর কলোনি, মতাশার, কাউনিয়া হাউজিং, চরবাড়িয়ার সাপানিয়া ও উলালঘুনি গ্রামের অন্তত ২৫ হাজার পরিবার এখন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ময়লার গন্ধ এতটাই তিব্র যে অনেকেই ভিটে মাটি ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন।

আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে স্থানটিকে মাদকের আখড়া বানিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা।জানাযায়, ওয়ার্ডটিতে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার বসবাস করে। ময়লার স্তুপের খুব কাছেই ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি কলেজসহ অন্তত ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ১০-১২টি মসজিদ রয়েছে। ভাগাড়ের ৪০ গজ দূরেই রয়েছে কাউনিয়া হাউজিং প্রকল্প। সেখানে অন্তত ৫০০ পরিবারের বাস। প্রায় ছয় একর জায়গা ২০০৩ সালে প্রথম এই ওয়ার্ডে ময়লা ফেলা শুরু হলেও ২০০৪ সাল থেকে ৩০টি ওয়ার্ডের ময়লা এই ওয়ার্ডে ফেলা শুরু হয়।

উন্মুক্তভাবে বর্জ্য ফেলার কারনে এই দূষিত ময়লা পাশের সাপানিয়া খালের পানিতে গিয়ে মিশেছে আর খালের পানি যাচ্ছে কীর্তনখোলায়। যার ফলে দূষিত হচ্ছে কীর্তনখোলা নদীর পানিও।পুরানপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহিন হাওলাদার জানান, অনেক সময় দুর্গন্ধ এতটা বেশি হয় যে ঘরে ঘুমাতে,খাওয়া-দাওয়া করতে পারা যায় না। মশা–মাছির উৎপাত দিনরাত বেড়েই চলছে। কোনো আত্মীয় আমাদের বাড়িতে আসতে চায় না।একই এলাকার রহিমা নামে এক গৃহিণী জানান, এই আজাবের মধ্যে আমাদের বাধ্য হয়ে বসবাস করতে হচ্ছে।

বাড়ি বিক্রি করতে চাইলেও কেউ কিনতে চায় না। বৃষ্টির সময় ময়লা ধোয়া পানি আমাদের বাড়িঘরে প্রবেশ করে। এই দূষিত ময়লা কাক-পক্ষী মুখে নিয়ে গাছে বসে, তা পড়ে বাড়ির ভেতর।’ এতে বিভিন্ন রকম রোগ ব্যাধির আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের। কী যে করব, বলতে পারি না নিজেকে খুবই অসহায় লাগে।এদিকে সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত ময়লার ভাগাড়ের মধ্যে ও আশপাশে চলে মাদক সেবন ও বিক্রি। ভয়ংকর এই মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার পড়া যুবসমাজ। ছোট শিশুরা মাদকের গন্ধে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের তান্ডবে এলাকার মহিলারা স্কুল-কলেজ ও রাস্তায় বের হতে পারছে না।বিশেষ সুত্রে জানাযায়, ময়লার ভাগারার উল্টো দিকে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে রাশেদ ও লাবুনি নামে এক দম্পতি। একাধিকবার মাদক সহ আটকের পর মামলা হলেও জামিনে বের হয়ে ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠে এই দম্পতি। মাদকসেবী একটি গ্যাং ও রয়েছে এই দম্পতির।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, এই দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে ময়লার ভাগাড়ের পাশে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

এত বড় ময়লার ভাগাড়ে ময়লার স্থুপের মধ্যে মাদক রাখার কারনে প্রশাসন অনেক সময় অভিযান করলেও মাদক উদ্ধারে ব্যর্থ হয়।তিনি আর জানান, কেউ তাদের এই মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করলে তার মাদক সেবী বাহিনী দিয়ে মারধর, ছবি তুলে মাদক দিয়ে ধরি দেয়ার হুমকিসহ ঐ এলাকায় বিভিন্ন তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে এই দম্পতি। তাদের এই কার্যকলাপে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ফারুখ মীর জানান, অধিগ্রহণ করা ভূমি উন্নয়ন ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ পেলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে।

কিছু দিন পূর্বেও এবিষয় নিয়ে সিটি করপোরেশন মেয়রের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি দ্রুত এর সমাধান করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।এসময় তিনি মাদকের বিষয় বলেন, এই দম্পতির মাদকের ব্যবসা সম্পর্কে জানার পরে আমি নিজে থানায় অবগত করেছি। বেশ কয়েকবার আমি নিজে গিয়েও তাদের বারন করছি। খুব দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, রাশেদ ও লাবনীকে একাধিক বার গ্রেফতার করে মাদক মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে বের হয়ে রাশেদ গোপনে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

মাদক ব্যবসায়ীদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। খুব দ্রুত তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।এসময় মাদকে বিরুদ্ধে তাদের জিরো টলারেন্স বলেও জানান এই কর্মকর্তা।অন্যদিকে ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাসিন্দার প্রায় একই অভিযোগ, ভাগাড় সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও লিখিত আবেদন দেয়ার পরও কোন লাভ হয়নি। তারা বলেন, একদিকে জনবসতির মাঝে সিটি করপোরেশনের এই খোলা ময়লার ভাগাড় অন্যদিকে মাদকের আস্তানা তাঁদের জীবনকে অসহনীয় যন্ত্রণাময় করে তুলেছে। তাই অচিরে এসকল সমস্যা সমাধনের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জোড়ালো হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।

আরও খবর

Sponsered content

%d bloggers like this: