18 February 2025 , 8:06:49 প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে অবশ্যই দেশে ফিরবেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তাঁর (তারেক রহমানের) মামলাগুলো শেষ করার চেষ্টা করছি। সে জন্য সময় লাগছে।
শেষ হয়ে যাবে। আমরা আশাবাদী। কবে নাগাদ তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন—এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা নির্ভর করবে তাঁর মামলাগুলো এবং সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।’
নির্বাচনের আগে কি আসবেন—জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, নির্বাচনের আগে তো অবশ্যই আসবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে সেটাই আমরা আশা করব, প্রত্যাশা করব। সেটা না দেওয়ার কোনো কারণ থাকবে না বলেই আমি মনে করি। কারণ নির্বাচন কমিশনও বলেছে, তারা প্রস্তুত থাকবে। ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে তারা কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে।
অতএব (ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন) না হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত বলেও জানান মির্জা ফখরুল। ১/১১-তে যেভাবে ‘মাইনাস টু’র চেষ্টা করা হয়েছিল, এখনো তেমন পরিস্থিতি আছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানে তো অনেক রকম কথা আছে। মিডিয়ায় অনেক কথা এসেছে। রাজনীতি যাঁরা করছেন, সরকারে যাঁরা আছেন তাঁরা নানা কথা বলছেন।
এসবের কারণে আশঙ্কা তো জাগতেই পারে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি (তেমন কিছু হবে না)। কারণ এই মুহূর্তে বিশ্বাসটা বেশি প্রয়োজন। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসাটা এখন সবথেকে বেশি প্রয়োজন। একটা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সেটা সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
নির্বাচনের সময় সরকার নিরপেক্ষ থাকবে বলে আশা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষতা ভঙ্গের যদি কোনো কারণ হয় তাহলে তো তাদেরই (সরকারের) উচিত হবে পদত্যাগ করা। কারণ নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন তো গ্রহণযোগ্য হবে না। আমার মনে হয়, প্রফেসর ইউনূসের সরকার নিরপেক্ষ থাকার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
জায়মা রহমানের যুক্তরাষ্ট্র সফর—তাঁর রাজনীতিতে আসার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উনি তো রাজনীতিতে নাই। আসার প্রশ্ন এখনো ওঠেনি। যুক্তরাষ্ট্রের ওটা ছিল একটা দাওয়াত। এটার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নাই।’
জায়মা রহমানের রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনাবিষয়ক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা আগে থেকেই অনুমান করা ঠিক হবে না। কারণ এখানে ব্যক্তিগত ব্যাপার আছে, শুধু দলীয় ব্যাপার নয়। জায়মা রহমান একজন ব্যক্তি। তিনি রাজনীতিতে আসবেন কি না সেটা তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। আমি মনে করি, এই উত্তরটা আমার দেওয়া ঠিক হবে না।’
আগামী নির্বাচনে ভারতের প্রভাব থাকবে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতের প্রভাব থাকার আর কোনো কারণ দেখি না। কারণ বর্তমান সরকার ভারতকে এখানে প্রভাব বিস্তার করতে দেবে বলে মনে হয় না।’
সম্প্রতি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্থিরতা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা। ষড়যন্ত্র তো থাকবেই। কিন্তু সেটা নস্যাত্ করে দেওয়ার মূল দায়িত্বটা নিতে হবে সরকারকে। কী কারণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সামনে এই সমস্ত ঘটনা ঘটল? তাদের এটার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বা অন্যের সম্পদ বিনষ্ট করা—এটা তো কখনো গণতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা থেকে হবে না। এটাকে বলা হচ্ছে, ‘মবতান্ত্রিক’। কিন্তু আমি এটাকে আরেক ধরনের ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ বলি।”
এদিকে গত রাতে আরো একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পরপরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি কোনো প্রতিশোধের রাজনীতি করবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ যাওয়ার পর পাঁচ-ছয় লাখ মারা যাবে। তা তো হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের বেশি সময়ে বিএনপিই সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ছিল বলে জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ভিকটিম। ১৫ বছরে সবচেয়ে বড় ভিকটিম আমরা। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সাত শর বেশি গুম হয়েছে।’
গণতন্ত্রকে বাস্তবে রূপ দিতে নির্বাচনই একমাত্র পথ। এদিকে আমাদের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, গতকাল ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে জেলা বিএনপির আয়োজনে ঠাকুরগাঁও জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে নির্বাচনই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে গণতন্ত্রে পৌঁছা যায়। সেই লক্ষ্যে নতুন করে আরেকটি সংগ্রাম শুরু করতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি ভয়ংকর সময় আমরা পার করে এসেছি। প্রায় ১৫ বছর একটি পাথর বুকের ওপর চাপা দিয়ে ছিল, সেই পাথর এ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দানবের মতো ধ্বংস করে দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, দেশে একটা ভূমিকম্প হয়ে গেছে। আমাদের তরুণরা-ছাত্ররা যেভাবে একটা ছাত্র-জনতার ঐক্য সংগঠিত করে আমাদের নতুন বাংলা নির্মাণ করার সুযোগ করে দিয়েছে, সেই সুযোগ যেন আমরা গ্রহণ করি।
শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, সেটা আমরা সর্বক্ষেত্রে—খেলাধুলা, সংস্কৃতি, আমাদের জীবন, সামাজিক জীবন, শিক্ষাক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে—সর্বক্ষেত্রে যেন নতুন বাংলাদেশ দেখতে পাই।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ফুটবল আমাদের দেশে একসময় জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু ক্রিকেটের জনপ্রিয়তায় ধীরে ধীরে ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমে গেছে।
একটি রাজনৈতিক দল দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে ক্রীড়াঙ্গনে, সারা দেশে যার টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে। এর দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’