30 August 2023 , 2:13:35 প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহীর চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নে টাকা চুরির অপবাদে দুই যুবককে হাত-পা ও চোখ বেঁধে পানিতে চুবিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১৮ আগস্ট) তাদের নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।নির্যাতনের শিকার হয়েছেন- শলুয়া ইউনিয়নের কানাজগাড়ি গ্রামের নূর মোহাম্মদ পলক (১৮) ও তার খালাতো ভাই শাকিল রহমান (২০)।
এদের মধ্যে, পলককে ডোবার মাটিতে পুঁতে এবং পরে হাত-পা বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে নির্যাতন করা হয়। আর, শাকিলকে চোখ-মুখ বেঁধে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।জানা গেছে, প্রতিবেশীর টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে গত ৯ জুলাই ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মুক্তার ইন্ধনে মোহন ও মছুকে তুলে নিয়ে যায় চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ (শুভ) ও তার সহযোগীরা। এরপর, বামনদীঘি বিলে নিয়ে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে বিলের পানিতে ডুবিয়ে নির্যাতন করে টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে অভিযুক্ত শুভ।
নির্যাতনের সময়কার ঘটনা মুঠোফোনে ভিডিও করে সে। পরবর্তীতে সে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পুকুরের হাঁটু পানিতে হাত-পা বেঁধে পলককে ফেলে রাখা হয়েছে। পানির মধ্যে একটি খুঁটির সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখা হয়। মাঝে মাঝে চেষ্টা করে মাথা তুলে শ্বাস নিচ্ছেন। আর পাশে একজন দাঁড়িয়ে দেখছে এবং আরেকজন স্বীকারোক্তি আদায় করার ভিডিও করছে।জানা গেছে, ছাত্রলীগের এ নেতা এবং তার সহযোগীরা সবাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে একাধিক মামলাও রয়েছে।
ভুক্তভোগী শাকিল রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শলুয়ার কানাজগাড়ি মোড় থেকে পলককে তুলে নিয়ে যায় শুভ ও তার লোকজন। তাকে বামনদীঘি বিলে নিয়ে গিয়ে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে প্রথমে মাটিতে পুঁতে ও পরে পানিতে ডুবিয়ে নির্যাতন করেন। এ সময় তারা পলকের কাছে টাকা নেওয়ার স্বীকারোক্তি আদায় করার চেষ্টা করে এবং সেটি তারা মুঠোফোনে ভিডিও করে।শাকিল আরও বলেন, শুভ তার লোকজন নিয়ে গিয়ে চোদ্দপাই এলাকা থেকে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে নির্যাতন করে বাম হাত ভেঙে দেয়। এরপর ওই অবস্থায় তাকে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠায়।
তিনি বলেন, দুই দিন আগে শুভ ও মুক্তা আমার বাড়িতে এসে তাদের সরবরাহকৃত ফেনসিডিল বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হলে আমাদের এভাবে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার পর আবার রাত ১টার দিকে বাড়িতে গিয়ে নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য হুমকি দিয়ে আসে। প্রকাশ করলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ পলক ও শাকিলকে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাদের আমি চিনি না। আপনারা ফোনে কথা না বলে সামনাসামনি এসে কথা বললে ভালো হয়; বলে ফোন কেটে দেয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে শলুয়া ইউনিয়নে মুক্তারকে খোঁজ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী নাম প্রকাশ করার শর্তে জানান, মুক্তা এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার বিষয়ে কেউ মুখ খুললে পরিণতি ভয়াবহ হবে।এ প্রসঙ্গে চারঘাট মডেল থানার ওসি মাহবুবুল আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মুক্তার, সাব্বির, লালনের বিরুদ্ধে মাদকের ৬ বা ৭টি মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারও করেছিলাম। এখন জামিনে রয়েছে।তিনি বলেন, নির্যাতনের বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। তবে কোনো অভিযোগ পাইনি। কাউকে নির্যাতনের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।