17 August 2024 , 3:10:53 প্রিন্ট সংস্করণ
গাইবান্ধা জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে বদলির আবেদন করছেন একের পর এক কর্মচারী। কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক প্রসেনজিৎ প্রণয় মিশ্রের মানসিক অত্যাচার, সামান্যতেই কৈফিয়ত তলব করে হয়রানি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং চাকরিবিধি বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অতিষ্ঠ হয়ে তারা একে একে বদলির আবেদন করছেন বলে জানান ভুক্তভোগী কর্মচারীরা। ইতোমধ্যে বদলিও হয়েছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব বিষয় নিয়ে গত ৮ আগস্ট উপপরিচালকের বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
যার একটি কপিসহ অভিযুক্ত উপ-পরিচালকের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বেশ কিছু নথিপত্রও এসেছে গণমাধ্যমের হাতে। অভিযোগপত্রে উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী কর্মচারীদের অভয় দিয়ে প্রকাশ্যে-গোপনে তদন্ত করার অনুরোধও জানানো হয়েছে। গাইবান্ধা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ৩০ জন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাক্ষরিত ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, উপপরিচালক প্রসেনজিৎ প্রণয় মিশ্র ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি গাইবান্ধায় যোগদানের পর থেকেই কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক মাসুদ পারভেজ ও উত্তম কুমাড়ের যোগসাজশে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। কর্মচারীদের মাঝে সঠিক কর্ম- বণ্টন না করে তার সিন্ডিকেটকে দিয়ে প্রায় সকল কর্ম সম্পাদন করে থাকেন।
এছাড়া সামান্যতেই কর্মচারীদেরকে একাধিকবার কৈফিয়ত তলবের মাধ্যমে তাদের বেতন কর্তন, অন্য জেলা/বিভাগে বদলির ভয় দেখিয়ে অফিসে একটা ভীতিকর ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলেই চোখ-রাঙিয়ে, তার আঞ্চলিক ভাষায় ব্যাটা-ব্যাটা সম্বোধন করে গালি- গালাচ করতে থাকেন। কোন কর্মচারী তার পারিবারিক অসুবিধার কারণে নৈমিত্তিক ছুটি/অর্জিত ছুটি চাইলে কিংবা ছুটির ব্যাপারে কথা বলতে গেলেও বিভিন্ন ভাষায় গালি গালাজ করেন এই কর্মকর্তা। উপপরিচালকের এসব অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সম্প্রতি জেলা অফিসের ষাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আল আমিন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আসুতোষ চন্দ্র মোদক ও এমএলএসএস মো. মানিকুজ্জামানসহ তিনজন কর্মচারী নিজ জেলায় চাকরিরত থাকা অবস্থায় অন্যত্র স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করতে বাধ্য হয়েছেন।
তাদের মধ্যে ১১ আগস্টের এক আদেশে ষাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আল আমিনকে লালমনিরহাট জেলা কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। অপর দুজনের বদলির বিষয়ে এখনো কোনও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন কর্মচারী অচিরেই অন্যত্র বদলির জন্য আবেদন করবেন মর্মে মনস্থির করেছেন, যা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গাইবান্ধার অত্র দফতরে সাতজন কর্মকর্তা মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু উপপরিচালক তার ক্ষমতার অপব্যবহার অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতার মাধ্যমে সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহাবুবা খাতুনকে আরো তিনটি উপজেলার (সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ) ক্লিনিক্যাল এবং নন ক্লিনিক্যাল বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন।
মাহাবুবা খাতুন বর্তমানে সাদদুল্লাপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলামকে ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং ডাক্তার না হওয়া সত্ত্বেও দুই উপজেলারই ক্লিনিক্যাল বিভাগের দায়িত্ব দেন । যোগদানের ৫ মাসেও দায়িত্বভার না পেয়ে ওই সাত কর্মকর্তার পাঁচজনই বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন জানিয়ে অন্য জেলায় বদলি নিয়ে চলে যান। অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, যখন কর্মচারীদের ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা, শিষ্ঠাচার ও নৈতিকতা বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে (নিপোর্ট) কর্মচারীদের নাম চাওয়া হয়।
তখন প্রসেনজিৎ প্রণয় মিশ্র উপজেলা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তার মনোনীত নামীয় তালিকা করে নিয়ে সেই তালিকা ট্রেনিং সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। যার ফলে জেলা অফিসের কর্মচারীরা প্রশিক্ষণ এবং ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েই আসছেন। অপরদিকে, কোন কর্মচারী তার পারিবারিক অসুবিধার কারণে নৈমিত্তিক ছুটি/অর্জিত ছুটি চাইলে কিংবা ছুটির ব্যাপারে কথা বলতে গেলে বকা-বকি, গালি গালাজ করেন। এছাড়া অত্র জেলা কার্যালয়ে অধিদপ্তর হতে ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক বরাদ্দকৃত বিভিন্ন খাত ওয়ারি অর্থ তারই মনোনীত অফিসের হিসাব রক্ষক মাসুদ পরভেজের যোগসাজশে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা তুলে আত্মসাৎ করছেন। যা খাত ওয়ারি কোন টাকা কার মাধ্যমে খরচ হয়েছে তার স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া জরুরি বলেও অভিযোগে দাবি করা হয়েছে। অভিযোগে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক প্রসেনজিৎ প্রণয় মিশ্রের চরিত্র নিয়েও।
যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রসেনজিৎ মিশ্র জেলার তার দফতরেরই একজন পরিবার কল্যাণ সহকারীর সাথে অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েন। পরে তোপের মুখে ওই কল্যাণ সহকারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে বাধ্য হন তিনি। যতিও ওই নারী একজন মুসলিম। এছাড়া তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ সহকারী নিগার সুলতানা চাকরির মাত্র ১৪ বছরেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়াও গাইবান্ধা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে রংপুর বিভাগের আট জেলার প্রথম সারির দিকে অবস্থান করছিল। কেন্দ্রটি ইতিপূর্বে পরপর বারো বার দেশের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রটির অগ্রগতির প্রতিবেদন দিন দিন নিম্নমুখী হয়েই চলেছে। এছাড়া ফ্যাসিলেটেটর উত্তম কুমাড় তার মূল দায়িত্ব পালন না করে উপপরিচালকের গাড়িতে ঘোরেন এবং উপপরিচালকের যাবতীয় কাজ করে থাকেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ সব অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে উপপরিচালক প্রসেনজিৎ প্রণয় মিশ্র মোবাইল ফোনে বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। বদলির জন্য আমার কাছে যে যে-রকম কাগজপত্র নিয়ে আসছে আমি বিধি মোতাবেক সেরকম সুপারিশ করেছি। আমাকেতো কেউ কিছু বলেনি । এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন” আমি আপনার মাধ্যমে প্রথম জানলাম। এসময় বিষয়টি না দেখে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এই কর্মকর্তা । এ ব্যাপারে অভিযোগের অনুলিপি পাওয়া পরিবার পরিকল্পনা অফিসের রংপুরের বিভাগীয় পরিচালক মো. এনামুল হক মোবাইল ফোনে বলেন, আমাদের অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়ের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।