18 April 2024 , 12:50:20 প্রিন্ট সংস্করণ
প্রায় ৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সুফিয়া বিবির খোঁজ মিলেছে। বর্তমানে তিনি পাকিস্তানের ওমর নামে একটি এলাকায় বাস করছেন। তার বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের নাওপাড়ার কাশীগঞ্জ গ্রামে। হারিয়ে যাওয়ার সময় সুফিয়ার বয়স ছিল আনুমানিক ২০-২১ বছর।বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল চারটায় পাকিস্তান থেকে বদরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে সুফিয়ার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন সুফিয়া।
আর সহযোগিতা করেন ‘দেশে ফেরা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন টিমের সদস্যরা।নিখোঁজের পর পরিবারের লোকজন বহুবছর কোন হদিশ না পেয়ে সুফিয়া মারা গেছেন বলে ধারণা করে নেন। কিন্তু গত সোমবার ‘দেশে ফেরা’ নামে ফেসবুক আইডি থেকে হারিয়ে যাওয়া সুফিয়ার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। পরে এটি ভাইরাল হলে সুফিয়ার স্বজনরা তাকে শনাক্ত করেন।স্বজনরা জানায়, বদরগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে চলা যমুনেশ্বরী নদী পাড়ের ছোট্ট গ্রাম কাশীগঞ্জ।
ওই গ্রামের চাঁন মামুদ ও শরিতন নেছা দম্পত্তির মেয়ে সুফিয়া বিবি। ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সে পারিবারিকভাবে পাশের দামোদরপুর ইউনিয়নের সৌলারপাড় গ্রামের জব্বার মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ঘরে দুই সন্তানও ছিল। কিন্তু কি কারণে কোন অভিমানে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন সুফিয়া। পরে স্বামী ও এক কন্যা সন্তানের মৃত্যু হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও সুফিয়ার কোনো সন্ধান পায়নি স্বজনরা। এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দেন তারা। অনেকেই মনে করেন সুফিয়া হয়ত মারা গেছেন।এরমধ্যে ‘দেশে ফেরা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ফেসবুক আইডি থেকে গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) একটি ভিডিও প্রকাশ হয়।
সেখানে এক মহিলা তার আকুতি প্রকাশ করেন। তার বাড়ি বাংলাদেশে বলে বক্তব্য দেন। এতে তিনি বলেন, তার নাম সুফিয়া বিবি। বাবার নাম চান মিয়া। ভাই সহিদার রহমান, মতিয়ার রহমান, বোন রোসনা বেগম ও নুর জাহান। বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায়। গ্রামের নাম তিনি বলেন, নাওপাড়া কাশীগঞ্জ।ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সুফিয়ার স্বজনদের দৃষ্টি কাড়ে। পরে যোগাযোগ করা হয় ‘দেশে ফেরা’ গ্রুপের সদস্যদের কাছে। তারাও সুফিয়ার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
‘দেশে ফেরা’ গ্রুপের সদস্য তানভির হাসান জানান, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সদস্য নিয়ে আমাদের একটি সামাজিক সংগঠন আছে। মূলত যারা বিভিন্নভাবে একদেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে নিখোঁজ বা পাচার হয়েছেন তাদের নিজ নিজ দেশের স্বজনদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। হারিয়ে যাওয়া মানুষদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়াই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ভারত পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১১৬ জনকে আমরা স্বজনদের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তেমনি একজন সুফিয়া বিবির সম্পর্কে আমাদের কাছে খোঁজ আসে। বর্তমানে তিনি পাকিস্তানে রয়েছেন। পাকিস্তানে বসবাসরত বন্ধু মারুফ হুসাইন মূলত সুফিয়ার বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে তথ্য জানতে চান। আমরা এটি ফেসবুকে ভাইরাল করলে তার স্বজনদের খোঁজ মেলে। এখন দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেওয়াই হচ্ছে আমাদের কাজ।
পরে প্রশাসনের মাধ্যমে আইনগত পদক্ষেপ নিলে সুফিয়া দেশে স্বজনদের কাছে ফিরতে পারবেন।তানভির হাসান বলেন, অনেক প্রতারক চক্র এরকম সুযোগ নিয়ে নিখোঁজের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেন। এ থেকে আমরা সকলকে সতর্ক করে দেই। আমরা কারো কাছ থেকে কোনো অর্থ সহায়তা নেই না।তানভির হাসান আরও বলেন, বুধবার বিকেল চারটায় সুফিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের মধ্যে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। তারা চাইলে দুই দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে ফেরত নিতে পারবে।
সুফিয়া বিবির ভাই সহিদার রহমানের ছেলে মেনহাজুল ইসলাম বলেন, আমার ফুপু হারিয়ে যাওয়ার সময় আমার বয়স ছিল ১০ বছর। তার অনেক স্মৃতি আমার মনে আছে। আমার বাপ-চাচারা তার অনেক খোঁজ-খবর করে। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান মেলেনি। এখন তার খবর জানার পর সবাই উদগ্রীব- উৎকণ্ঠায় আছে। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে। তার দেশে ফেরার প্রতীক্ষা করছি আমরা।সুফিয়ার আরেক ভাতিজা কাঁচামাল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন,‘ধারণা করছি ফুপু রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। আমরা ভেবেছিলাম তিনি মারা গেছেন। আমার ফুপুর ছবি দেখে এক বাক্যে বাড়ির সবাই তাকে চিনে ফেলেছে। তার আসার অপেক্ষায় আমরা এখন দিন গুনছি।মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম ভুট্টু বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। আমরাও চাই সুফিয়া নিজ দেশে স্বজনদের কাছে ফিরে আসুক। এখন সুফিয়ার স্বজনরা যে ধরনের সহযোগিতা চাইবে তা করা হবে।