সারা দেশ

বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি

লক্ষ্মীপুরে টানা বৃষ্টি ও বন্যার পানি ঢুকে প্রায় ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ২৩ হাজার মানুষ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে উঠেছে। অন্যদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ কষ্ট করে বাড়িঘরেই রয়েছেন। বাকিরা উঁচু এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। নোয়াখালী থেকে অনবরত বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দিদের জন্য কোন খাবার যাচ্ছে না।

এজন্য নানানভাবে ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাতে পর্যাপ্ত নৌকার প্রয়োজন। জেলার বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা যায়। এদিকে সোমবার (২৬ আগস্ট) ভোররাতে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার লাহারকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়ণ কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে আব্দুল মালেক (৭০) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছে।

আব্দুল মালেক সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লাহারকান্দি গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। ধারণা করা হচ্ছে ঠান্ডাজনিত কারণে স্ট্রোক করে তিনি মারা গেছেন।সোমবার দুপুরে জেলার কমলনগরে চরলরেন্স ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া এলাকার মাছ ধরতে গিয়ে খালে ডুবে মো. হৃদয় (১৪) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নিহত হৃদয় মোল্লাপাড়া এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে।

চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) আব্দুল খালেক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার সময় হৃদয় খালে জাল ফেলে মাছ শিকার করতে যায়। খালের পানিতে প্রচুর স্রোত ছিল। একপর্যায়ে জাল ফেলতে গিয়ে স্রোতের টানে হৃদয় পড়ে যায়। এতে ডুবে গিয়ে সে মারা যায়। তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে- সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, দিঘলী, কুশাখালি, চরশাহী, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, দত্তপাড়া, বাঙ্গাখাঁ, লাহারকান্দি, তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের রহমতখালী খাল সংলগ্ন লামচরী, সমসেরাবাদ, বাঞ্চানগর, মধ্য বাঞ্চানগর, দক্ষিণ বাঞ্চানগর, মজুপুর এলাকাসহ, চররুহিতা, পার্বতীনগর, কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ, চরকাদিরা, চর লরেন্স, রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা, চরবাদাম ও চর রমিজ, রামগঞ্জের লামচর, কাঞ্চনপুর, চন্ডিপুর, ভাটরা, ভোলাকোট, রামগঞ্জ পৌরসভা, ভাদুর, করপাড়া, দরবেশপুর, রায়পুরের সোনাপুর, কেরোয়া, চরপাতা, বামনী, চরমোহনা, রায়পুর, দক্ষিণ চর-আবাবিল ইউনিয়ন ও রায়পুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা বন্যায় কবলিত।

এরমধ্যে দিঘলী, দিঘলী, চরশাহীসহ দুর্গম এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। ওইসব এলাকার মানুষ খাদ্য সংকটে হাহাকার করছেন। যে যেভাবে পারছেন ত্রাণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় উদ্ধারকারী ও ত্রাণ সহায়তাকারীরা দুর্গম এলাকাগুলোতে যেতে পারছেন না বলে জানা গেছে। বৈষম্য বিরোধী বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ছাত্র নাজিম উদ্দিন শুভ জানান, সদরের বাঙাখা ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকার কোথাও মাথার উপরে, আবার কোথাও বুক ও কোমর সমান পানি।

ওই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড এক বাড়িতে বিকেলে তিন জন আটকা পড়ে। পরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় নৌকা দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। বাকিদের উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, নোয়াখালী থেকে মূলত সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ, কুশাখালি, দিঘলীসহ পূর্বের ইউনিয়ন গুলো দিয়ে লক্ষ্মীপুরে প্রবেশ করে। এতে সদরে বিকেল পর্যন্ত ১৭ হাজার পানিবন্দি মানুষ ৭০টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

তাছাড়া বেসরকারি ভাবে যে-সব ত্রাণ আসছে, কো-অর্ডিনেটর করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র পাঠানো হচ্ছে। তবে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে মঙ্গলবার থেকে সদরের সবগুলো আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানীয় ভাবে খিচুড়ি রান্না করে আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষদের খাওয়ানো হবে। যে-সব মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে পারে নি। গ্রামে গ্রামে তাদের বাড়ি বাড়ি শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র সরবরাহ করা হবে। আশা করি দুই তিন দিনে মধ্য বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪১৯ মেট্রিক টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে প্রত্যেক উপজেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯ টা থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

বন্যার পানি ৬ ইঞ্চি বৃদ্ধি পেয়েছে। রহমতখালী খাল হয়ে নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, জেলার বর্তমানে প্রায় ৮লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৪০৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখনো পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৪৩ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক দুর্গম এলাকায় যারা আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যাননি, তাদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা জেলার সর্বত্র ত্রাণ বিতরণ করছে।