সারা দেশ

এবার দেশে ইউরোপের টিউলিপ

এবার দেশে ইউরোপের টিউলিপ

গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের দেলোয়ার হোসেন দেশের অনেকের কাছেই পরিচিত। বছর তিন আগে এ দেশের মাটিতে প্রথম টিউলিপ ফোটানোর সফলতা অর্জন করেন তিনি। দেলোয়ার এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। আগামীর কৃষিকে বাণিজ্যে রূপ দিতে কাজ করে চলেছেন। ধীরে কিন্তু নিশ্চিত গতিতে এগিয়ে চলেছেন স্বপ্ন বাস্তব করতে। স্বপ্নরথের সুযোগ্য সারথি হিসেবে পেয়েছেন স্ত্রী শেলি হোসেনকে। দুজনে মিলে এই সময়ের মধ্যেই দেশে টিউলিপের বিস্তার করেছেন বহুদূর।

তাঁর এই অগ্রগতির খবর জানতে সম্প্রতি এক শীতের ভোরে উপস্থিত হই কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের কৃষিখামারে।গাজীপুর ছাড়াতেই সেদিন কামড় বসাল শীতের হিমেল হাওয়া। আমাদের দেশে মৌসুমের কিছুটা সময় শীতের প্রকোপ বেশ বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শীত আসছেও কিছুটা দেরিতে। জলবায়ু পরিবর্তনে ফুল ফোটার সময় ও স্থানে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে।বাংলার মাটিতে টিউলিপ ফোটা হয়তো তারই এক দৃষ্টান্ত। প্রায় তিন যুগ আগে ইউরোপের টিউলিপ বিছানো বিস্তীর্ণ দিগন্তের মতো একটি নিসর্গ বাংলাদেশে রচনার স্বপ্ন দেখেছিলেন বেলজিয়ামের নাগরিক জ্যঁ পল পারেইঁ। তিনি একটি উন্নয়ন সংস্থার হয়ে বাংলাদেশে কাজ করছিলেন।

এ দেশের উর্বর মাটিতে সব ফুল-ফসলই ফলানো সম্ভব—এমন বিশ্বাস নিয়ে সাভারে রোপণ করেছিলেন ইউরোপিয়ান কাট ফ্লাওয়ার ক্রিসেনথিমাম, জারবেরা, কার্নিশান ও টিউলিপ। অন্য ফুলগুলোর ক্ষেত্রে সফলতা পেলেও কয়েকবারের চেষ্টায়ও টিউলিপ ফোটানোর স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর।২০২০ সালে গাজীপুরের শ্রীপুর পূর্বখণ্ডে প্রথম টিউলিপ ফুুটয়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেন দেলোয়ার। কয়েক বছরের মধ্যেই এটি এখন এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার জায়গা। আমাদের দেশের প্রকৃতি দৃশ্যত টিউলিপের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠেছে। শান্ত নিরিবিলি পূর্বখণ্ড গ্রামে রঙিন নেটশেডের ভেতর টিউলিপের বাগান। টেলিভিশনে যখন এই টিউলিপের বাগান তুলে ধরি, তখন বহু মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল এখানে।

দেলোয়ার এ বছর ডলার সংকটে আশানুরূপ টিউলিপের বাল্ব (কন্দ) আনতে পারেননি। মাত্র ৪০ হাজার বাল্ব এনেছিলেন। সেগুলো তেঁতুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।হিমালয়ের পাদদেশ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কয়েক বছর ধরে বাড়ছে পর্যটকের ভিড়। মেঘ বা কুয়াশা কম থাকলে সেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ হিমালয়ের বিভিন্ন চূড়া দেখা যায়। সেই তেঁতুলিয়ায় এবার টিউলিপ তার অপার্থিব রং ছড়িয়েছে। আমার বিশ্বাস, একদিন এ ফুলকে ঘিরে উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে পর্যটনও গড়ে উঠবে। তবে একে বাস্তব রূপ দিতে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা দূর করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন দেলোয়ার। তাঁর মতে, এখাতে ভ্যাট-ট্যাক্স অতিরিক্ত।

সাম্প্রতিককালে নতুন সমস্যা হিসেবে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট।দেলোয়ারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, আমাদের মতো দেশে টিউলিপের চাষ সম্প্রসারণের ব্যাপারে প্রস্তুত হচ্ছে ফুল বাণিজ্যের কেন্দ্রভূমি খোদ নেদারল্যান্ডস। তারাও চাইছে, কৃষিসমৃদ্ধ বাংলাদেশের মাটিতে টিউলিপের চাষ সম্প্রসারিত হোক। আমাদের দেশের উপযোগী জাত উন্নয়নেও তৎপর তারা। তবে চারা আমদানি ও বাজার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা যুক্ত না হলে এই সম্ভাবনাগুলো বিকশিত হতে অনেক বেশি সময় নেবে। দেলোয়ার জানালেন, বাংলাদেশে টিউলিপের চাষ শুরু হয় ডিসেম্বরে। আর নেদারল্যান্ডসে শুরু হয় ফেব্রুয়ারিতে। এদিক থেকে আমরা টিউলিপ চাষে সফল হলে বিশ্ববাজারে আমাদের ফুলের সম্ভাবনাও এগিয়ে থাকবে।