সারা দেশ

শীতে কাঁপছে যশোর বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ

পৌষের শুরুতে তেমন একটা ঠান্ডা না থাকলেও মাসের শেষ দিকে এসে জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেলা বাড়লেও শীতল হাওয়ার দাপটে যেন তেজহীন সূর্য। কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতে একদম জবুথবু অবস্থা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। এদিকে, প্রচণ্ড এই শীতে ঠান্ডা জনিত রোগ শুরু হয়েছে।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। সবেচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ। এছাড়া বহির্বিভাগ থেকে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। শীতজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে চিকিৎসকরা অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার (১৩ জানুয়ারি) যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগে শুক্রবারও ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিলো ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঘন কুয়াশার দেখা মিলছে। ফলে সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জালিয়ে অল্প গতিতে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। হাড়কাঁপানো শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে তারা উপার্জনের সন্ধানে যেতে পারছেন না।

তারপরও অনেকেই বাঁধ্য হয়ে কাজের উদ্দেশ্যে ছুটছেন।শুক্রবার সকালে চুড়ামনকাটি বাজারে শ্রম বিক্রির আশায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আনসার আলী (৫৩)। রীতিমতো তিনি শীতে কাঁপছেন। আনসার আলী জানান, কিছু করার নেই। শীতে ঘরবন্দি থাকলে পেট ভরবে না। তার আয়ে চলে ৪ জনের পরিবারের সংসার। বাধ্য হয়ে কাজের সন্দেহে এসেছেন।

মোটরচালিত ভ্যান চালক ইকরাম জানান, হিম বাতাসে শীত বেশি অনভূত হচ্ছে। ভ্যান চালানোর সময় হাত-পা কোকঁড়া লাগছে। চাল-ডাল কেনার মতো টাকা আয় করতে পারলেই বাড়ি ফিরে যাবো।কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, এই ধান রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করার কাজ করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। মাঠে বাতাসে ক্ষেতে পানির মধ্যে বেশি সময় দাঁড়ানো যাচ্ছে না। ঠান্ডায় পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির সামনে অথবা রাস্তার পাশে খড়খুটোতে আগুন জ্বালিয়ে অনেকে শরীরে তাপ নিচ্ছে।
রমজান আলী নামে একজন মুদি দোকানি জানিয়েছেন, দোকানের ভেতরেও যেনো ঠান্ডায় থাকা দায়। বাইরেও হাড়কাঁপানো শীত। তাই কয়েকজন মিলে আগুন জ্বালিয়ে শীত তাড়ানোর চেষ্টা করছি।

এদিকে, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, শীতের প্রকোপের সাথেই বেশির ভাগ শিশুরা সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগ বাদ পড়ছে না বয়স্ক মানুষেরাও। গত ১ সপ্তাহে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুধুমাত্র শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ শতাধিক।

দুই হাজারের বেশি রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। রোগ প্রতি শিশুর প্রতি মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে। গায়ে গরম কাপড় ছাড়াও হাত পায়ে মোজা পরাতে হবে। শীতজনিত রোগের বেশিরভাগই স্বল্পমেয়াদী ও সহজ চিকিৎসায় সেরে যায়।

বিধায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা অন্য যে কোনো ওষুধ সেবন না করার আহবান জানিয়েছেন তারা।হাসপাতালের তত্বাধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, শীতজনিত রোগীর সমস্যা বেড়েছে। শিশু ও বয়স্করা জ্বর ,সর্দি কাঁশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। শীত জনিত রোগে আক্রান্ত থেকে কোনো বয়সের মানুষই ঝুঁকিমুক্ত নন।

ফলে সকলকে সচেতন হতে হবে।যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার জানান, প্রচণ্ড শীতে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। মানুষের শীত নিবারণের জন্য ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ৫৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গভীর রাতে মানুষের কাছে কাছে গিয়ে শীতবস্ত্র তুলে দেয়া হচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content

%d bloggers like this: