8 November 2023 , 3:35:56 প্রিন্ট সংস্করণ
মানিকগঞ্জ জেলা শহরের দক্ষিণ সেওতা এলাকায় মাহমুদা আক্তার (৪৫) হত্যা মামলায় দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তার মেয়ে ও মেয়ের প্রেমিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জয়শ্রী সমদ্দার আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ জিন্দাপীড় এলাকার আব্দুল বারেকের ছেলে মো. রাকিব হোসেন (২৪) ও নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার পূর্ব গোলমন্ডা এলাকার মো. মাহফুজার রহমান (২০)।আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ভিকটিমের মেয়ে জুলেখা আক্তার জ্যোতি (১৯) ও জ্যোতির প্রেমিক ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ জিন্দাপীড় এলাকার মো. শফিউর রহমান নাঈম (২৫)।
অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় মামলার অপর আসামি জলঢাকা উপজেলার পূর্ব গোলমন্ডা এলাকার আব্দুল ভাসানীর ছেলে নূর হোসেনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ভিকটিমের স্বামী জহিরুল ইসলাম হাঁটতে ও বাজার করার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। সকাল পৌনে ৮টার দিকে বাজার করে বাসায় ফিরলে মেয়ে জ্যোতি বাড়ির গেট খুলে দেন। এরপর মেয়েকে তার মা কোথায় জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান যে তার মা রান্না করছেন।
এরপর বাড়ির পঞ্চম তলায় পোষা কবুতরকে খাবার দিতে যান জহিরুল। সেখান থেকে ফিরে রুমের সামনে জ্যোতিকে কাঁদতে দেখে কান্নার কারণ জানতে চান তিনি। এসময় জ্যোতি এলোমেলো কথাবার্তা বললে নিজেদের শোবার ঘরে গিয়ে স্ত্রী মাহমুদাকে লেপ গায়ে দেওয়া অবস্থায় দেখতে পান জহিরুল। কিছুক্ষণ ডাকার পরও কোনো সাড়া না পেয়ে কাছে গিয়ে দেখেন মাহমুদার জিহ্বা বের হয়ে আছে, নাকেও রক্ত। এসময় তার চিৎকারে আশপাশের রুমের ভাড়াটিয়ারা চলে আসেন। এ অবস্থায় মাহমুদাকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মামলা করেন জহিরুল। মামলার তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৩১ মে মানিকগঞ্জ সদর থানার সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম আল মামুন ভিকটিমের মেয়ে জ্যোতি ও তার প্রেমিকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।মামলায় মোট ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। মামলার শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় বুধবার এ রায় দিলেন বিচারক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জুলেখা আক্তার জ্যোতি একটু জেদি ও বেপরোয়া হওয়ায় ঘটনার প্রায় তিন মাস আগে ঢাকার ধামরাই উপজেলার গোলাকান্দা গ্রামের মারুফের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেন জহিরুল-মাহমুদা দম্পতি। বিয়ের দুই বছর পর নাঈমের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে তার প্রেম হয়। একপর্যায়ে তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরপর ২০১৯ সালের নভেম্বর স্বামীর সঙ্গে জ্যোতির ডিভোর্স হলে জ্যোতি মানিকগঞ্জে বাবার বাড়ি চলে আসেন।
এরপর নাঈম মাঝে মধ্যে জ্যোতির সঙ্গে ওই বাড়িতে অবৈধ মেলামেশা করলে জ্যোতিকে তার মা শাসন করতেন। আর দ্রুত জ্যোতিকে অন্যত্র বিয়ে দিতে চাইতেন মাহমুদা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাঈমের সহায়তায় মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জ্যোতি। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার জন্য নাঈম দুজন লোক ঠিক করেন দেড় লাখ টাকায়। ঘটনার আগের দিন বিকেলে নাঈমসহ তিনজন জ্যোতির কক্ষে গিয়ে লুকিয়ে ছিলেন। ঘটনার দিন সকালে জ্যোতির বাবা হাঁটতে বের হলে জ্যোতিসহ তারা সবাই মাহমুদার কক্ষে গিয়ে দেখেন, তিনি সেলাই মেশিনে কাজ করছেন।
জ্যোতির সঙ্গে অপরিচিত লোকদের দেখে মাহমুদা চিৎকার করার চেষ্টা করলে জ্যোতি দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন আর বাকি তিনজন মাহমুদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহ খাটের ওপরে রেখে লেপ দিয়ে ঢেকে রেখে কৌশলে পালিয়ে যান।আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন আমিনুল হক আকবর এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মানিকগঞ্জ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর আইনজীবী আবদুস সালাম।