জাতীয়

আজই কি শেষ দিন সমঝোতার জন্য

আজই কি শেষ দিন সমঝোতার জন্য

৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের ভোটের তারিখ ধরে নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে সে অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে যখন জোর প্রস্তুতি চলছে, তখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনেও রাজপথে দাবি আদায়ে ব্যস্ত বিরোধী দল বিএনপি।

নির্বাচন কমিশন আজ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় না বাড়ালে ২০১৪ সালের মতো বিএনপি এবারও নির্বাচনের বাইরে থাকবে। তাই অনেকের মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে- বিএনপিকে ভোটে আনতে কিংবা বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য আজই কি শেষ দিন?   একাধিক নির্বাচন কমিশনার এরই মধ্যে বলেছেন যে বিএনপি নির্বাচনে এলে তফসিল পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি চিন্তা করে দেখবেন তারা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দলটির সিনিয়র নেতাদের অনেকেই কারাগারে। নির্বাচনের জন্য যে ধরণের প্রস্তুতি দরকার সেটি বিএনপির মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশে অতীতের নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সাধারণত ৪৫ দিন পর্যাপ্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবার তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের তারিখ পর্যন্ত আরও এক সপ্তাহ বেশি সময় রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদপূর্তির আগে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা আছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের তারিখ আরও দু-সপ্তাহ পিছিয়ে দিলে সংবিধানের কোনো বরখেলাপ হবে না বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন কমিশন চাইলে তফসিল ডিসেম্বরের ১২ তারিখ পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে পারে।  কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে কি না? তিনি বলেন, বিএনপির অর্ধেকের বেশি নেতা-কর্মী কারাগারে। তাহলে কার সঙ্গে সংলাপ হবে? তাহলে সমঝোতা করার জন্য আজই কি শেষ দিন? শাহদীন মালিক মনে করেন, বাস্তবতার নিরিখে সেটাই মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘তাত্ত্বিকভাবে বলা যায় যে আরও দু’সপ্তাহ সময় আছে। কিন্তু ওটা প্র্যাকটিকাল না, কারণ কার সঙ্গে বলবে? নেতাই তো নেই। আর বিএনপির সমমনা দলগুলোরও তো এক দাবি। এখনো পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে সমঝোতার আভাস দেখা যাচ্ছে? এমন প্রশ্নে শাহদিন মালিক বলেন, ‘না, সার্বিক রাজনৈতিক আবহাওয়া সংলাপের কোনো ইঙ্গিতই দিচ্ছে না। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এর আগে যতবার তফসিল পেছানো হয়েছে সেটি ঘটেছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার আগে।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর তফসিল পেছানোর নজির নেই। আর সেক্ষেত্রে সমঝোতার জন্য আজই শেষ দিন বলে ধরে নিচ্ছেন অনেকে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমরা যদি ইতিহাস অনুসরণ করি তাহলে আজকের পরে নির্বাচনের তফসিল পেছানোর সুযোগ নেই। তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে তফসিল বাতিলও করতে পারে। কমিশনের সে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আছে।আব্দুল আলীম বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও নির্বাচন কমিশন চাইলে সে সময় বৃদ্ধি করতে পারে।

ইচ্ছা করলেই সেটা করতে পারবে। কারণ এখানে আইনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে সেটা করা যাবে না। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপি দফায় দফায় অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজও দেশজুড়ে হরতাল কর্মসূচি পালন করছে প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। ফলে সমঝোতার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) যে রাজনৈতিক কর্মসূচি তা দেখে তো মনে হচ্ছে না যে তারা হয়তো সাড়া দেবে এই মুহূর্তে। তাহলে ৩০ শে নভেম্বরই কি একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য শেষ দিন? এমন প্রশ্নে গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, ‘এটা বলা খুব কঠিন। রাজনীতি তো একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস (ধারাবাহিক প্রক্রিয়া)।

যা বলছে নির্বাচন কমিশন

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সমঝোতার সময় যখন দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, তখন কূটনৈতিক তৎপরতাও থেমে নেই। ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এবং ইউরোপের আরও সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা বুধবার নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করেছেন।বৈঠক শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের পরিষ্কার করেই বলেছেন, তারা গণতান্ত্রিক, বিশ্বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করেন।

অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কারণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন আইনত এবং সাংবিধানিকভাবে বাধ্য।গত বুধবার সাংবাদিকদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন যাতে ফ্রি, ফেয়ার, পিসফুল এন্ড ক্রেডিবল হয়, সেটা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আমার বিশ্বাস আমাদের যে সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা সেটা তারা বুঝতে পেরেছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে যদি কোন মতবিরোধ ধাকে, কোন বিভেদ থাকে, কোন বিভাজন থাকে সেখানে আমরা কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারি না।

বিএনপি-আওয়ামী লীগ যা বলছে

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখনো পর্যন্ত তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল পেছানো হবে কি না সেটি নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ, তারা নির্বাচনের তফসিল পেছানোর জন্য আন্দোলন করছেন না। তারা মনে করেন, নির্বাচনের তফসিল পেছালেই ‘রাজনৈতিক অচলাবস্থা’ দূর হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, তাদের দল আন্দোলন করছে এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। সর্বোপরি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। এসব কিছু পরিবর্তন আনবার জন্যে যে প্রক্রিয়া অপরিহার্য তা হলো একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের জন্যে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন। কেবল মনোনয়ন জমা দেওয়ার তারিখ পরিবর্তন করলেই তা অর্জিত হয়ে যাবে না।

এদিকে গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময়সীমা আছে। সে সময়সীমা অতিক্রম করে তফসিল পরিবর্তন তারা কখনো সমর্থন করবেন না। এই সময়সীমাকে অতিক্রম করবে, এমন কোন পদক্ষেপ, এমন কোন পরিবর্তন আমরা কখনো সমর্থন করব না।

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের নির্বাচন নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতারও সমালোচনা করে বলেন, আজকে যারা মানবাধিকারের কথা বলে বাংলাদেশে, সুশাসনের কথা বলে, যারা ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশনের কথা বড় গলায় কথা বলে – তারা আজকে একটা পক্ষের অপকর্ম, অত্যাচার, গণতন্ত্র বিরোধী, সংবিধান বিরোধী অ্যাকটিভিটিজ (কর্মকাণ্ড) সম্পর্কে কেন নীরব?। এখন কেউ কিছু বলে না। ইউরোপও কিছু বলে না, আমেরিকাও কিছু বলে না।