কৃষি বার্তা

কুমারখালীতে চারা রোপনে ব্যস্ত পেঁয়াজ চাষির

পেঁয়াজের চারা রোপণের ধুম পড়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। বছরজুড়েই ঝাঁজ ছিল পেঁয়াজের বাজারে। মৌসুমের শুরুতে ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সেই পেঁয়াজ কয়েক মাসে আগে বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি। এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। আর প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১৮-২৫ টাকা। ফলে খরচ বাদ দিয়েও লাভ রয়েছে চাষিদের। তাই চলতি অর্থবছর ফের এ ফসল আবাদে আগ্রহ দেখা গেছে চাষিদের মধ্যে।
তবে ডিলারদের সিন্ডিকেটের কারণে ভরা মৌসুমেও চাহিদামত নন ইউরিয়া টিএসপি, এমওপি এবং ডিওপি সার পাওয়া যাচ্ছেনা চাষীরা। কেউ কেউ সার পেলেও তাঁদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট কৃষিজমির পরিমাণ ১৮ হাজার ২৪০ হেক্টর। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমি পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে দুই হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। বছর জুড়ে ভালো দাম পাওয়ায় পেঁয়াজ আবাদে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত জমিতে পেঁয়াজ চাষাবাদের প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ। জমি ভাড়া, বীজ, সার, চাষ ও পরিচর্চা বাবদ এবছর প্রতি হেক্টরে খরচ পড়ছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।
উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, বাগুলাট ও চাপড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষক, শ্রমিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী ১৫ থেকে ২০ জন দলবদ্ধভাবে চারা রোপণ করছে। তারা জানান, চারা রোপণের ভরা মৌসুমে শ্রমিক চরম সংকট থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ নিজেদের জমিতে আবার অনেকে খরচ মেটাতে ৪০০-৫০০ টাকা মজুরিতে মাঠে কাজ করেন। যদুবয়রা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক আবু বাদশা বলেন, গত বছর সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে ৪৫০ মণ পেঁয়াজ হয়েছিল। বছর জুড়েই পেঁয়াজের ভাল ছিল। ১কেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি করেছি। এবছর দশ বিঘা জমিতে চারা রোপণ করছি।
কৃষক তোয়াফেল হোসেন বলেন, ডিলার কাছ গেলেই বলে সার নেই। বার বার ঘুরেই ৮০ কেজি টিএসপির বদলে ২০ কেজি, ৭৫ কেজি করে এমওপি এবং ডিওপির বদলে মাত্র ১৫ কেজি করে সার পেয়েছি। আড়াই বিঘা জমিতে চারা রোপণ করছি। খরচ পড়ছে ৪৫ হাজার টাকা। ৫০ থেকে ৬০ মণ ফলনের প্রত্যাশা তাঁর। কৃষক লায়েব আলী বলেন, যদুবয়রা ডিলারের কাছে বারবার গিয়েও সার পাইনি। পরে স্থানীয় এক মুদি দোকানীর কাছ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা বস্তার (৫০ কেজি) সার এক হাজার ৮০০ টাকায় কিনেছি।
কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছেনা ডিলাররা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেশি দামে সার বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন ডিলাররা। অভিযোগ অস্বীকার করে বাঁশগ্রামের সাব ডিলার রেজাউল ইসলাম ফোনে বলেন, মোবাইলে সব কথা বলা যায়না। তিনি প্রতিবেদকে গোপনে দেখা করতে বলেন। আর যদুবয়রা ইউনিয়নের বিসিআইসি সারের ডিলারের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, সরকারিভাবে চাহিদা অনুযায়ী সারের সরবরাহ নেই। সেজন্য কৃষকদের তিনি চাহিদা অনুযায়ী সার দিচ্ছেনা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, বছরজুড়ে পেঁয়াজের ভাল দাম থাকায় এ চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছে কৃষকরা। চাহিদা অনুযায়ী সারের সরবরাহ না থাকায় সংকটে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সার নিয়ে ডিলাররা কোনো সিন্ডিকেট করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম।