সারা দেশ

আপনি আপনার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকেও লজ্জিত করেছেন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরব ছিলেন আওয়ামীপন্থি অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে ‘আলো আসবেই’ গোপন গ্রুপ খুলে ছাত্রদের বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করেন। গ্রুপটির অ্যাডমিনও ছিলেন এই অভিনেত্রী। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সম্প্রতি এই গ্রুপের কথোপকথনের কয়েকটি স্ক্রিনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

তাতে আওয়ামী লীগ নেতা ও দলটির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শিল্পীদের কথোপকথন রয়েছে। গ্রুপটি নিয়ে তীব্র সামালোচনার মধ্যে গতকাল শনিবার এ নিয়ে মুখ খুলেন শামীমা তুষ্টি। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপ নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন তিনি। এই গ্রুপে তার অংশগ্রহণ সঠিক ছিলে দাবি করে সেখানে অভিনেত্রী জানান, তার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আওয়ামী লীগের সক্রিয় একজন কর্মী।

আওয়ামী সদস্য হওয়ায় তার নিজের কিছু বিচার-বিবেচনা আছে বলেও জানান তিনি। তবে স্ট্যাটাসে তিনি ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের সমর্থক নন দাবি করায় নেটিজেনদের তোপের মুখে পড়েন তুষ্টি। কারণ হিসাবে তারা উল্লেখ করেন, কোটা আন্দোলন ও ছাত্রদের বিপক্ষে তুষ্টি ফেসবুকে অনেক পোস্ট করেছেন। সরকার পতনের পর সেগুলো আর তার ওয়ালে দেখা যাচ্ছে না। অভিনেত্রীর প্রতিটা পোস্ট আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল।

এতদিন পর ‘হত্যাকাণ্ডের সমর্থক নয়’ দাবি করে স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি গা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। এসব তার নতুন নাটক ও কৌশল। তারেক মিয়াজি নামে এক ব্যক্তি বলেন, একটা কথা সব সময় ক্লিয়ার হওয়া উচিত সবার। মুক্তিযোদ্ধা মানেই আওয়ামী লীগ না! আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু আমি বিএনপির একজন কর্মী!তাতে কোনো সমস্যা নয়।

বাংলাদেশ মানেই সবার দেশ! বিগত সরকার বার বার এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে এটা উনার বাবার দেশ!উনিই স্বাধীন করেছে! আর এটাই উনার ভুল ছিল।এজন্যই উনার শোকের মাসে উনাকেই চূড়ান্ত শোক দিয়ে দিয়েছে এ দেশের ছাত্র-জনতা। ফজলে আজিম জুয়েল লিখেছেন, রোম যখন পুড়ছিল তখন আপনারা বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল, তখনো আপনারা চুপ ছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত ভয়াবহ সব মৃত্যুর মিছিলের খবর বেরিয়েছে, সেটা আপনাদের কাঁদায়নি, আপনাদের ভাবায়নি। এই দলকানা রাজনীতি আপনাদের শুধু প্রতিহিংসাপরায়ন আর বিবেকহীন করেছে। লিখলে, লেখা থামবে না। নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করান আর ভাবুন- আপনারা মানুষ হিসেবে কোন শ্রেণিতে পড়েন। দ্বীন মোহাম্মদ লিখেছেন, আপনি একজন শিল্পী ও শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে যেভাবে পোস্ট করতেন তা অবাক করার মতো ঘৃণা ছড়িয়েছে।

আমরা যে কোনো দল সমর্থন করতে পারি কিন্তু ন্যায় অন্যায় না বুঝলে আমরা দেশ ও সমাজের আবর্জনা। ৯৩ বিলিয়ন পাচার, গুম, খুন, বছরের পর বছর ধরে গায়েবি মামলার নির্যাতন, নগ্ন ভোট ডাকাতি, সীমাহীন দুর্নীতি, সহস্রাধিক শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ড, ক্ষমতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপব্যবহার, দুঃসাশন আপনাদের অন্ধ বিবেককে নাড়া নিতে পারেনি। অথচ আপনারা নাকি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান।

আপনারা কখনো কি দেশকে ভালোবেসেছেন? জেসমিন জামান লিখেছেন, আপনি যে গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন, সেখানে যে গরম পানি ছাত্রদের ওপর ঢেলে দেওয়ার প্ল্যান হলো সেই অরুণা বিশ্বাসও একই কথা বলেছেন। বাচ্চাদের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে এটা আপনারা জানতেন না। খুব ভালো স্ট্র্যাটেজি বানিয়েছেন। এ স্ট্যাটাসটা দিয়ে নিজের পরিচয়টা কমপ্লিট করলেন।

দলের সব ঠিক ছিল না, মিডিয়ার সব ঠিক ছিল না, কিন্তু আপনি ঠিক। তুষ্টির সমালোচনা করে মনির সিরাজুম বলেছেন, আপু, আপনি একটা ফটো দিয়েছিলেন। বলেছিলাম- এখন বিউটি শো অফ করার টাইম না। তখন অলরেডি ৪/৫ গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছিল। আপনি বললেন- আপনারা তো আছেন দেখার জন্য। শাওন শরিফ লিখেছেন, অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ করা উচিত ছিল আরও আগে।

এতগুলো মানুষ মারা গেলো, হাজার হাজার মানুষ আহত হলো- নিশ্চয়ই সবই আপনারা জানতেন। হয় তো আপনারা ভাবছিলেন যত আন্দোলনই হোক, যত লাশই পড়ুক- আওয়ামী সরকারই টিকে যাবে! রুমানা রশিদ খান বলেছেন, অন্য সবার কথা ৫ শতাংশ বিলিভ করলেও আপনার এই পোস্টের একটি শব্দ ও আপনার সঙ্গে যাচ্ছে না। ছাত্রদের যে পরিমাণ অপমান করে আপনি লিখেছেন, সেখানেই থাকতেন।

আজকের এই স্ট্যাটাসটা খুবই হাস্যকর। সোহাগ লিখেছেন, এই কোটা আন্দোলনের বিপক্ষে, ছাত্রদের বিপক্ষে আপনার সেই পোস্টগুলো কই? প্রতিটা পোস্ট আপনি এই আন্দোলনের বিপক্ষে যেভাবে কাউন্টার দিয়েছেন, যারা সেগুলো দেখছে তারাই বলতে পারে। আর এতদিন পর গা বাঁচানোর জন্য এখন আপনি নাটক করতে আসছেন। রানা মাসুদ লিখেছেন, দলের চেয়ে মানুষ বড়। সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষের জীবন।

আর শিল্পী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি। দুঃখ সারা পৃথিবী দেখলো আর আপনারা দেখতে এবং বুঝতে দেরি করে ফেললেন। শিল্পীদের কাছ থেকে মানুষ আরও দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। আপনার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এটা খুবই গর্বের বিষয় কিন্তু আপনি যা করেছেন আপনি আপনার বাবাকেও লজ্জিত করেছেন।

নির্বিচারে মানুষ ছাত্র-জনতা হত্যাকে আপনি বাজেভাবে সাপোর্ট করেছেন এবং খুবই নোংরাভাবে লিখেছেন। ফারজিন খান লিখেছেন, আপনি যে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতে পারেন কিন্তু দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে মানুষের প্রতি কোনো অবিচারকে আপনার সহ্য করা উচিৎ নয়।

আরও খবর

Sponsered content