সারা দেশ

বয়স ১৭ হলেও দেখতে শিশুর মতো সুমাইয়া

বয়স ১৭ হলেও দেখতে শিশুর মতো সুমাইয়া

বাড়ির আঙিনায় খেলাধুলা মত্ত দুই শিশু। প্রথম দেখলে মনে হতে পারে ৪-৫ বছরের শিশু। অথচ এদের মধ্যে একজনের বয়স ১৭ বছর।সুমাইয়া আক্তার। তিনি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পবিত্রঝাড় ফরিঙ্গাপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিন ও সুরতন বেগম দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সন্তান। বয়সে ১৭ হলেও তার বাহ্যিক অবয়ব ৫ বছরের শিশুর মতো।

জানা গেছে, তার জন্ম ২০০৭ সালে। জন্মের পর পা বেঁকে যাওয়া ও নানা জটিলতায় অন্য ৮-১০টা শিশুর মতো শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি হয়নি তার। এমনকি ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত ঠিকমতো কথাও বলতে পারেনি। অর্থাভাবে অসহায় বাবা-মা তার কোনো চিকিৎসা না করালেও বছরখানেক আগে সে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়।

কয়েক মাস চিকিৎসা করার পর সে কথা বলতে পারছে।শুক্রবার (১০ই মে) দুপুরে সুমাইয়াদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়,সে তার এক খেলার সাথীর সঙ্গে খেলা করছে। এসময় তার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তার মুরগির মাংস খেতে ভালো লাগে। লম্বা চুলে বেনী করতে খোঁপা করতে তার ইচ্ছে করে। তার বাবা-মার টাকা না থাকায় তার চিকিৎসা হয়নি।

এজন্য সে বড় হয়নি। তবে তার বড় হতে খুব ইচ্ছে করে।সুমাইয়ার বাবা জামাল উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। দুই ছেলের মধ্যে একজন মারা গেছে। সুমাইয়া যখন প্রতিবন্ধী হয় তখন তাকে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। সহায়সম্বল বলতে চার শতক বাড়ি ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই। নিজেরাই ঠিকমতো চলতে পারি না।

চিকিৎসা করাব কীভাবে। তার তো বিয়ে হবে না। বয়সে কিশোরী হলেও এখনো তাকে শিশুর মতো লালনপালন করতে হচ্ছে। আমরা মারা গেলে সুমাইয়ার কী গতি হবে, এই নিয়ে চিন্তিত আমরা।সুমাইয়ার প্রতিবেশীরা গণমাধ্যমকে জানান, দেড় বয়স থেকে তারা দেখছেন সুমাইয়া বেড়ে উঠছে না। ছোটবেলা থেকেই তার পা বাঁকা। প্রতিবন্ধীর যে সামান্য কিছু ভাতা পায় তা দিয়ে তারা চলতে পারে না।

সুমাইয়ার পরিবার খুব অসহায় ও গরিব। চিকিৎসকরা মেয়েটির চিকিৎসার জন্য যে পরামর্শ দিয়েছিলেন সামর্থ্য না থাকায় তারা তা করাতে পারছে না।সুমাইয়ার বাবা-মা মারা গেলে তার কী হবে এ নিয়ে তারাও চিন্তিত। তাদের প্রত্যাশা এখনো যদি মেয়েটির উন্নত চিকিৎসা করা হয় হয়তো সে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে।

তাই তারা তার চিকিৎসায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হক সুমন বলেন, গণমাধ্যমের সহায়তায় সুমাইয়ার বিষয়টি জানতে পেলাম। সে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতার পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ থেকে তাকে সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা চেষ্টা করব।