বাণিজ্য

বেস্ট হোল্ডিংসের প্রকল্পগুলো ব্যবসা সফল হওয়ার বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় থাকা বেস্ট হোল্ডিংসের প্রকল্পগুলো ব্যবসা সফল হওয়ার বিষয়ে শতভাগ আশাবাদ কোম্পানিটির চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ। গত শুক্রবার কোম্পানির নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো সাংবাদিকদের নিয়ে পরিদর্শনে গিয়ে এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা সম্পর্কেও বর্ণনা করেন।

আমিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো মুনাফা অর্জনের চিত্রই তার প্রকৃত প্রমাণ বহন করে। এর বাইরে কোম্পানির রিটেইন্ড আর্নিংস বা অর্জিত মুনাফা রয়েছে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি, যা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা দেয়।তিনি বলেন, ‘বেস্ট হোল্ডিংস এমন একটি কোম্পানি যারা বিশ্বের স্বনামধন্য চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করে। তিনি এ-ও বলেন, বহুজাতিকগুলো হলো- ম্যারিয়ট, লো মেরিডিয়েন, হেইলিবেরি ও লাক্সারি কালেকশন।

এর মধ্যে লাক্সারি কালেকশন বিশ্বের চেইন হোটেলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড। ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যবসা পরিচালনা করে বেস্ট হোল্ডিংস। আমাদের হাতে থাকা প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আগামী বছরেই শেষ করতে পারলে এর কার্যক্রম থেকে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে, যা বিনিয়োগকারী ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে অবদান রাখবে।আমিন আহমেদ বলেন, চাহিদা মূল্যায়ন এবং স্থান নির্বাচনে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পাঁচ তারকা হোটেল লো মেরিডিয়েন প্রতিষ্ঠা একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। ঢাকায় আগত বিদেশি অতিথিরা এই হোটেলের গুণগতমান ও সেবায় মুগ্ধ হয়ে বিশ্বের অনেক নামীদামি হোটেলের চেয়েও বেশি অর্থমূল্য দিতে আপত্তি করেন না।

হোটেল প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫-০৬ সালে শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দেরি হওয়ায় লো মেরিডিয়েন ঢাকার উদ্বোধনকে সাত বছর পিছিয়ে দিতে হয়েছিল। ফলে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। ৯০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প সময়মতো শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় এর ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে কোম্পানিকে ব্যাংক ঋণের সহায়তা নিতে হয়েছে। লো মেরিডিয়েন হোটেল এবং ভালুকা ও নোয়াখালীতে কোম্পানির কৃষি খামারের জন্য ব্যাংক ঋণ ও কনভার্টিবল বন্ড ইস্যুর পথ সহজ হয়েছিল।

২০১৯ সালে বেস্ট হোল্ডিংস তার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বন্ডের মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল। ইতোমধ্যেই এর বড় একটা অংশ নগদ এবং ইক্যুইটিতে রূপান্তরের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে।আমিন আহমেদ বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা যখন লো মেরিডিয়েনের যাত্রা শুরু করলাম তার কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মহামারি কোভিড-১৯-এর আঘাত এল। যার ফলে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ হিসাব বছরে আমাদের ব্যবসা অনেক কমে এসেছিল। এর মধ্যে ২০২০-২১ হিসাব বছরে আমাদের রাজস্ব আয় নেমে আসে ১১৩ কোটি টাকায়, যা দুই বছর আগের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। অবশ্য ২০২২-২৩ হিসাব বছরে আমরা মহামারির আগের বছরের থেকেও ভালো অবস্থানে ফিরতে পেরেছি।

আমরা আশা করছি, আগামী বছরে আমাদের ব্যবসা আরও বাড়বে। কেননা, লো মেরিডিয়েন ঢাকার এখন রুম ভাড়া আগের থেকে ৭০-৮০ শতাংশ বেশি।প্রোসপেক্টাস অনুসারে, বেস্ট হোল্ডিংসের আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ভবন ও অন্যান্য পূর্তকাজ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়, ঋণ পরিশোধ ও আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ খাতে ব্যয় করা হবে। কোম্পানিটির নির্মাণাধীন প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম – আন্তর্জাতিক মানের একটি ম্যারিয়ট হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট, ব্যক্তিগত ভিলা, স্কুল প্রকল্প এবং ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল।

আইপিওর মাধ্যমে তোলা ৩৫০ কোটি টাকার মধ্যে ১৭৬ কোটি ৯ লাখ টাকা তারা ব্যবহার করবে ভালুকায় ৪৩ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা রিসোর্টটির ভবন তৈরিতে। ৪৫ কোটি টাকা দিয়ে এই রিসোর্টের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা হবে। আর ১১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হবে। এ ছাড়া আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য, কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে শান্তা ইকুইটি লিমিটেড ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটি কোনো ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা, অনুমোদন বা বিতরণ করতে পারবে না বলে শর্ত দিয়েছে বিএসইসি।

%d bloggers like this: