12 August 2024 , 4:47:14 প্রিন্ট সংস্করণ
‘আম্মা আমরা জিতেছি, আজকে মিছিল কইরা কালকে বাড়িতে আমু, তুমি চিন্তা কইর না, দোয়া কইর’। এটাই ছিল মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তোফাজ্জল হোসেনের শেষ কথা। কিন্তু বিজয় মিছিলে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তোফাজ্জলের। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গেলে মিরপুর ২ নম্বরে পুলিশের ছোড়া গুলি মাথায় লেগে নিহত হন তোফাজ্জল।
ঢাকার মিরপুর-১১ নম্বরে রডমিস্ত্রির কাজ করতেন তোফাজ্জল হোসেন খান (২৭)। বিয়ে করেছেন ২ বছর আগে। রয়েছে তাসফিয়া নামের ১০ মাসের শিশু সন্তান।ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভালুকজান গ্রামের মৃত নেকবর আলীর ছেলে তোফাজ্জল। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ভাইদের মধ্যে ছোট ভাই রিফাত শারীরিক প্রতিবন্ধী। ভিটেমাটি বলতে একটি ঘরের জায়গা মাত্র। বাবা নেকবর আলী খান ছিলেন রিকশাচালক।
স্থানীয়রা জানান, অভাবের তাড়নায় দুই ভাই মোফাজ্জল হোসেন খান ও তোফাজ্জল হোসেন খান ঢাকায় চলে যান। সেখানে রড মিস্ত্রির কাজ করতেন। ভালোই চলছিল সংসার, এক বোনকে বিয়ে দিলেও আরেক বোন বিয়ে দিতে বাকি। এরই মাঝে এক বছর পর মারা যায় তার বাবা নেকবর আলী। বাবার মৃত্যুতে অন্ধকার নেমে আসে পরিবারটিতে।মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ছোট ভাই তোফাজ্জলের পড়াশোনার ইচ্ছে থাকার পরও অভাবের সংসারে প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে আমার সাথে ঢাকায় কাজে যোগ দেয়।
ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে কারো কথা না শুনে বিল্ডিংয়ের কাজ ফেলে আন্দোলনে যোগ দিত প্রতিদিন। গত ৪ আগস্ট শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়েও ডাক্তারের কাছে না গিয়ে, ছাত্রদের সাথে আন্দোলন করে গেছে। ৫ আগস্ট সকালে আমাকে ফোন করে বলে, আমরা জিতে গেছি, দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। আজকে বিজয় মিছিলে যাব। আমি বলেছিলাম আমিও যাব। কিন্তু আমার ভাই বিজয় মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যাবে, তা কখনো ভাবিনি। কারণ আন্দোলন করে সফল হওয়ায় বিজয় মিছিল হবে, আনন্দ উল্লাস হবে এটা স্বাভাবিক বিষয়।
সেখানে পুলিশ গুলি করবে এটা কী ভাবা যায়? প্রতক্ষ্যদর্শী আশিক বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মিরপুর আজমল হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর তোফাজ্জল হোসেন মারা যায়।তোফাজ্জলের মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ স্ত্রী হামিদা। বারবার শুধু এক কথায় বলে যাচ্ছেন, ‘তাসফিয়ার আব্বা কখন আসবে’।প্রতিবেশী কেউ তার কাছে গেলে বলেন, ‘আপনারা বসেন, তাসফিয়ার আব্বা আসছে হাত মুখ ধোয়ার পানি দিয়ে আসি।
তোফাজ্জলের ১০ মাসের শিশু সন্তান তাসফিয়া শুধু ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে, মনে হয় কিছু খুঁজছে।তোফাজ্জলের মা মমতাজ বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আপনারা আমার ছেলের কোনো খবর লইয়া আইছুন ও আমারে ফোনে কইছে আম্মা আমরা জিতেছি, আজকে মিছিল কইরা কালকে বাড়িতে আমু, তুমি চিন্তা কইরনা দোয়া কইর।