বাণিজ্য

কুষ্টিয়ার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বেড়েছে তামাকের চাষ

তামাকজাত কোম্পানিগুলোর লোভনীয় প্রলোভন আর অধিক মুনাফার আসায় কুষ্টিয়ার চাষীরা ঝুঁকেছেন তামাক চাষে। ফলে কমে আসছে খাদ্যশস্যের উৎপাদন, শঙ্কা দেখা দিয়েছে খাদ্য ঘাটতিরও। চিকিৎসকরা বলছেন, তামাক চাষের কারনে ক্যান্সার সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে বিষবৃক্ষ তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠের যেদিকে তাকানো যাবে, শুধু তামাক ক্ষেত চোখে পড়বে। তামাকজাত কোম্পানিগুলো বীজ, সারসহ সবধরণের সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তার ফলে দৌলতপুর সহ কুষ্টিয়ায় বেড়েছে তামাকের চাষ। সেইসাথে অধিক মুনাফার আসায় খাদ্যশস্য উৎপাদন ছেড়ে কৃষকরাও ঝুঁকেছেন তামাক চাষে। গতবছর জেলায় ১০ হাজার ৯৩১ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হলেও এবছর তা বেড়ে দাড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৮৫ হেক্টরে। ফলে দিন দিন কমে আসছে খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ। এতেকরে একদিকে হুমকীর মুখে পড়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন অপরদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে জনসাধারন এমনটি জানিয়েছেন, দৌলতপুর উপজেলার চুয়ামল্লিকপাড়া গ্রামের সফল কৃষক রানা হোসেন। তামাকজাত কোম্পানীর লোভনীয় সুবিধা ও সরকারের কৃষি বিভাগের উদাসিনতায় সবচেয়ে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে দৌলতপুর উপজেলায়। এভাবে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেলে ভবিষ্যতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটবে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন শাহীন রেজা ও জুয়েল আহমেদ সহ দৌলতপুরের সচেতন নাগরিক সমাজ। তামাক চাষ ও ব্যবহারের কারনে হতে পারে শ^াসকষ্ট, ক্যান্সারসহ নানা ধরণের জটিল রোগ। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রন করা না গেলে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে কৃষক পরিবার ও জনসাধারণ বলে মনে করেন স্থানীয় চিকিৎসক ডা. হাফিউর রহমান পলাশ। জেলায় দিন দিন তামাকের চাষ বাড়লেও কৃষি বিভাগের দাবি তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এমনটি জানিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর উপ-পরিচালক সুফী মো. রফিকুজ্জামান। এদিকে গত ১৯ ফেব্র“য়ারি সকালে কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে কৃষক ও খামারীদের সাথে মতবিনিময়কালে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার তামাক চাষের বিষয়ে উদ্বেগের কথা বলেছেন, কুষ্টিয়ার মানুষ তামাকের মধ্যে বসে আছে। অথচ কেউ বললেন না তামাকের কথা। এই সভার পরেই দৌলতপুর উপজেলায় যাবো। আমার তো মনে হয় সেখানে তামাক ছাড়া কিছুই দেখবো না। কেমন করে গরু ছাগল পালন করবেন প্রশ্ন রেখে উপদেষ্টা বলেন, আসলে তামাক পাতা তো একটা বিষ, নিকোটিন। তাহলে সেই নিকোটিন বিষ আমরা উৎপাদন করছি। যার ফলে গরু-ছাগল উৎপাদন অনেক কমে গেছে। হাঁস, মুরগি পালনের জায়গা নেই। তিনি বলেন, গবাদি পশু পালনের ক্ষেত্রে তামাক চাষ বড় বাঁধা। ধীরে ধীরে তামাক চাষ বন্ধ করে আমাদের খাদ্য উৎপাদনে যেতে হবে। তাই তামাক চাষ নিয়ন্ত্রনে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া হলে জেলায় খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতিসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে জনসাধারন, এমনটিই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।