10 July 2024 , 4:13:00 প্রিন্ট সংস্করণ
এলাকাবাসীর বাধা উপেক্ষা করে ঠাকুরগাঁওয়ে তড়িঘড়ি করে রাতের আঁধারে রাস্তা কার্পেটিং করার অভিযোগ উঠেছে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। দায়সারা ভাবে কাজ করায় পরদিন সকালে জুতার সঙ্গে উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। এনিয়ে অভিযোগ করার পরও প্রতীকার পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। ফলে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন যানবাহন ও পথচারীরা। আর বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে গেলেই তিনি রেগে যান বলে জানান এলাকাবাসী।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কার কাজ শুরুর পর থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন একাধিকার উপজেলা প্রকৌশলী মাইদুল ইসলামকে জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর যোগসাজশে কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ধুলামিশ্রিত পাথর ব্যবহারের সময় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও তা মানা হয়নি। তবে কাজ শেষে বিল পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রকৌশলীরাই সহযোগিতা করেন।জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর-বাঘমারা পাকা সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় সেই রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
প্রায় ২০ লাখ টাকায় ঐ রাস্তার ১ হাজার মিটার অংশ ১৫ মিলিমিটার সিলকোড কার্পেটিং করার কাজ পায় জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আব্দুস সামাদ নামে এক ঠিকাদার।নিয়ম না মেনে এলজিইডিকে ম্যানেজ করে গেল কয়েকদিন ধরে রাতের আদারে বৃষ্টির মধ্যেই সেই রাস্তায় কার্পেটিংয়ের কাজ করেন ঠিকাদারের লোকজন। পরে লোকজন রাস্তা দিয়ে হাঁটলে জুতার সঙ্গে উঠে আসে কার্পেটিং।স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের লোকজন স্থানীয়দের বাধা উপেক্ষা করে রাতের আঁধারে রাস্তায় নিম্নমানের পিচের কার্পেটিংয়ের কাজ করে।
যা হাত দিয়ে টান দিলে বা পা দিয়ে ঘষা দিলেই উঠে যাচ্ছে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।রায়হান নামে এক যুবক বলেন, এই রাস্তার কাজে শুরু থেকেই ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে আসছে। রাস্তার কার্পেটিংয়ে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কারণে হাত দিলেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। আমরা এলাকার লোকজন ঠিকাদারকে ভালোভাবে কাজ করতে বললে তিনি কোনো কথা শোনেননি।পথচারী লিমন হোসেন বলেন, কোনো গাড়ি এসে ব্রেক করলে রাস্তার কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। আমরা চাই, ভালোভাবে আমাদের রাস্তার কাজ করা হোক।
যাতে রাস্তাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়। ঠিকাদার দায়সারা ভাবে রাস্তার কাজ করে শান্তির বদলে দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের।ক্ষোভ প্রকাশ করে এক বৃদ্ধ বলেন, সরকার এতো টাকা খরচ করে রাস্তা করেছে, সেখানে এলজিইডি ও ঠিকাদারের দুনীর্তির কারণে সব টাকা জলে গেল। হাত দিয়ে রাস্তার কার্পেট তোলা যাচ্ছে, সেখানে ভারি যানবাহন কিভাবে যাবে। সরকার রাস্তা করতে কি কম টাকা দেয়? এলজিইডি-ঠিকাদারের জন্য সরকারের বদনাম। নিম্নমানের পাথর, ইট, বালু, খোয়া ব্যবহার করে রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী করে ঠিকাদার চলে গেছে।
আমরা এই অনিয়মের বিচার চাই।বাঘমারা গ্রামের কয়েকজন জানান, রাতের আধারে ঠিকাদারের লোকজন রাস্তার কাজ করে। এলাকাবাসীরা রাতের বেলা কাজ করতে বাঁধা দিলেও তারা শোনেননি। পরের দিন দেখা যায় জুতার সঙ্গে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে রাস্তার বেশির ভাগ কার্পেটিং উঠে গেছে। উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতীকার পাওয়া যাচ্ছে না।অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে ঠিকাদার আব্দুস সামাদ বলেন, কোনো সমস্যা হলে এলজিইডির সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী কাজ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পীরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরির্দশন করে দেখার পর বলা যাবে কি হয়েছে। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গেয়ে জানান, আমরা চেষ্টা করি ভালভাবে কাজ বাস্তবায়ন করে নেয়ার। এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছিল। তখন কাজ ভালই হচ্ছিল। এখন কেনো উঠে যাচ্ছে খতিয়ে দেখা হবে।