সারা দেশ

কাজের টেন্ডারে অনিয়ম ১৪ কোটি টাকার কাজ

চট্টগ্রাম বন্দরে গ্যান্টি ক্রেন মেরামতের ১৩ কোটি ৭৮ লাখ ৮ হাজার টাকার কাজ বাগিয়ে নিতে এক ঠিকাদার ভয়াবহ অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত সময়ে পারফরমেন্স গ্যারান্টি (পিজি) জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ার পরও অপেক্ষাকৃত একটি ‘অদক্ষ’ প্রতিষ্ঠানকে এই কাজের ঠিকাদারি দেওয়া হচ্ছে। অন্য ঠিকাদাররা অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যাক ডেটে ব্যাংকের পারফরমেন্স গ্যারান্টি ইস্যু ও গ্রহণ দেখিয়ে এই অনিয়ম করা হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগসাজশ করে এই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে।সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তিনটি রাবার টায়ার গ্যান্টি ক্রেন বা আরটিজি (ইয়ার্ডে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজে ব্যবহৃত) মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। ২২, ২৩ ও ২৪ নম্বর আরটিজি’র ৫ বছরের জন্য মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি ৭৮ লাখ ৮ হাজার টাকা।

এই টেন্ডারে অংশ নিয়ে প্রজেক্ট প্রমোটরস প্রাইভেট লিমিটেড ও সাইফ পাওয়ার টেক নামে দুটি প্রতিষ্ঠান রেসপন্সিভ বা যোগ্য বিবেচিত হয়।সূত্র জানায়, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় ঢাকার প্রজেক্ট প্রমোটরস প্রাইভেট লিমিটেড। তাদেরকে বন্দর কর্তৃপক্ষ পিজি জমা দেওয়ার জন্য চিঠি দেয়। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী ২১ মে ছিল পিজি বা পারফরম্যান্স গ্যারান্টি জমা দেয়ার শেষ দিন। প্রাক্কলতি ব্যয়ের ১০ শতাংশ হিসাবে এই গ্যারান্টির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।

সূত্র অভিযোগ করেছে, প্রজেক্ট প্রমোটরস প্রাইভেট লিমিটেড নির্ধারিত তারিখে পিজি জমা দিতে পারেনি। নির্ধারিত তারিখের দুই দিন পর অর্থাৎ ২৩ মে ২০২৪ তারিখে পিজি জমা দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (মেকানিক্যাল) বরাবরে চিঠি দেয়। ব্যাক ডেটে পিজি জমা নেওয়ার জন্য বন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নির্ধারিত অফিস সময়ের শেষেও কয়েকঘণ্টা অতিরিক্ত অফিস করেন।অভিযোগ উঠেছে, অংশগ্রহণকারী অপর প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে জোর আপত্তি তুললে ‘ব্যাক ডেটে’ (২১ মে ২০২৪ তারিখ দেখিয়ে) পিজি জমার চিঠি দেওয়া হয়।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখা থেকে এই পিজি ইস্যু দেখানো হয়। সূত্র আরও অভিযোগ করেছে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে আলোচ্য পিজি অনুমোদন করে ২৩ মে ২০২৪ তারিখে। কিন্তু এটি ইস্যু দেখানো হয় ২১ মে ২০২৪ তারিখে, দুই দিন আগে। অনুমোদনের আগে পিজি ইস্যুর কোনো সুযোগ নেই।এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন যুগ্ম পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ব্যাংক যদি পারফরম্যান্স গ্যারান্টি ইস্যু করে তা অনুমোদন হওয়ার পরই করতে পারে। কিন্তু অনুমোদনের আগে ইস্যু করার কোনো সুযোগ নেই।

এ ধরনের কিছু করা হলে তা হবে জালিয়াতি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজারকে জবাবদিহি করতে হবে।সূত্র অভিযোগ করেছে, ব্যাক ডেটে মাধ্যমে পিজি ইস্যু ও গ্রহণ করে যে প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে সেই প্রতিষ্ঠানটি ‘অদক্ষ’। সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরে মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ কাজের মতো তেমন কোনো ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা নেই। নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডারের শর্ত পূরণ করতে না পারলে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়ার কথা।

কিন্তু বন্দরের মেকানিক্যাল বিভাগ অনিয়মের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকেই কাজ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।টেন্ডারে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (মেকানিক্যাল) আমিনুল ইসলামের ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। তাই তার বক্তব্য জানা যায়নি।তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, ‘ঠিকাদারি কাজের জন্য নির্ধারিত তারিখ বা সময়ের মধ্যে পিজি বা পারফরমেন্স গ্যারান্টি জমা দেওয়া না হলে, ব্যাক ডেটে জমা নেয়া হলে সেটা নিশ্চয় অনিয়ম।

সে ক্ষেত্রে ব্যাংক কোনো তারিখে পিজি অনুমোদন এবং ইস্যু করেছে সেটা যেমন দেখার বিষয় আছে, তেমনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোন তারিখে পিজি জমা দিল বা বন্দর কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করল সেটিও দেখার বিষয় আছে। আরটিজি মেরামতের টেন্ডারের পিজি জমা ও গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটি সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানাতে পারব।

%d bloggers like this: