পরিবেশ

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল যেসব অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল যেসব অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১২ অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিও হতে পারে।রোববার (১৯শে মে) সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এদিকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আইলা এবং আম্ফানের মতো ক্ষতি হতে পারে রেমাল। ২৫শে মের পর যে কোনো সময় আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়ার অধিদপ্তর।ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর নামকরণ করেছে ওমান। আরবিতে যার অর্থ বালি। অবশ্য এই নামে ফিলিস্তিনের গাজা থেকে ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরে একটি শহরও রয়েছে। এবার ধেয়ে আসতে পারে সেই ‘রেমাল’।

তবে কতটা ভয়াবহ হবে সেই ঝড়, তা এখনো স্পষ্ট নয়।আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য সাগরের পানির তলার তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে হয়। কমপক্ষে ৫০ মিটার গভীরতা অবধি এই তাপমাত্রা থাকতে হয়। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে এই ধরনের তাপমাত্রাই রয়েছে। সাগরের পানির তাপমাত্রা ৩০-৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি রয়েছে। এই গরম পানিকেই ঘূর্ণিঝড়ের ‘চালিকাশক্তি’ বলে মনে করা হয়।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেছেন, এখন পর্যন্ত এটার মুভমেন্টটা ভারতের উড়িষ্যার দিকে। তৈরি না হওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না বাংলাদেশে আঘাত হানবে কি না, তবে ২৭ তারিখের দিকে উপকূলে আসতে পারে।আবহাওয়াবিদরা বলছেন, রেমালও আম্ফানের মতো বিধ্বংসী হতে পারে। তবে এটির শক্তি কতটুকু; শেষ পর্যন্ত সুপার সাইক্লোনে রূপ নেবে কিনা, তা জানতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড়-নিম্নচাপ কিংবা লঘুচাপও সৃষ্টি হয়নি। ফলে সাগরটিতে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির যথেষ্ট পরিমাণে শক্তি জমা হয়েছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু ২০ মের পরে সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই এটি খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৪টি প্রধান উপাদানের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩টির উপস্থিতি রয়েছে মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল বিশ্লেষণ করে এই গবেষক জানান, আবহাওয়ার প্রায় সব মডেলই দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা নির্দেশ করছে। যা আগামী ২১শে মে থেকে ২৩শে মের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে। এরপর ২৪শে মে পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অর্জন করতে পারে।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল যদি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িশা রাজ্যের মধ্যবর্তী উপকূলে আঘাত করে, তবে স্থলভাগে আঘাতের সম্ভব্য সময় হবে ২৫শে মে সন্ধ্যার পর থেকে ২৬শে মে সন্ধ্যার মধ্যে। আর যদি বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করে, তবে সম্ভাব্য সময় হবে ২৬শে মে দুপুর ১২টার পর থেকে ২৭শে মে সন্ধ্যার মধ্যে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২১শে মে প্রবল শক্তি নিয়ে দেশের উপকূলে আঘাত হানে আয়লা। সে সময় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় দেশের কৃষকদের। ২০২০ সালের ২০শে মে দেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তবে সুন্দরবনের কারণে রক্ষা পাওয়া গেছে সে যাত্রায়। এবার সেই আয়লা-আম্ফানের মাসেই ধেয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমালের।