সারা দেশ

আবারও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সেমাই

আবারও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সেমাই

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কুমিল্লায় শুরু হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্ন মানের সেমাই তৈরির কাজ। ব্যবসায়ী নিম্ন মানের পাম অয়েল ও ডালডা দিয়ে তৈরি করছে সেমাই। এসব সেমাইয়ে মেশানো হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্যামিকেল। অধিক মুনাফা লাভের আশায় ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্ন মানের ময়দা ও পোড়া তেল।

সরেজমিনে আর্দশ সদর উপজেলার বিবিরবাজার এলাকার কাশফুল ফুড প্রোডাক্টাস নামে একটি কারখানা গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের সেমাই তৈরি করছে, তবে ব্যান্ডের বিভিন্ন কোম্পানি নামে তারা প্যাকেট করে বাজারজাত করছেন। আট থেকে নয়জন করে শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের দম ফেলার সুযোগ নেই। শ্রমিকদের কেউ ময়দার খামি তৈরি করছেন।

কেউ বিদ্যুৎঞ্চালিত যন্ত্রে সেমাই বানাচ্ছেন। আবার কয়েকজন শ্রমিক সেমাই কারখানার ছাদে নিয়ে বাঁশের মাচা তৈরি করে রোদে শুকাচ্ছেন।স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সেমাই তৈরির কোনো চিত্র দেখা যায়নি সেখানে। নোংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশেই সেমাই উৎপাদন, শুকানো ও প্রক্রিয়াজাত চলছে। কর্মব্যস্ত শ্রমিকদের শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। আর ঘর্মাক্ত শরীরে কাঁধে করে এসব সেমাই রোদে শুকাতে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।

কাশফুল ফুড প্রোডাক্টাসনের মতো নামে বেনামে জেলার মুরাদনগর, চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ, লাকসামে আরো ১০টি কারখানার একই চিত্র দেখা যায়। এসব সেমাই কুমিল্লার নগরীসহ ঢাকায় ট্রাকে ভরে সেমাই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি টুকরিতে ৩৫ কেজি সেমাই থাকে। প্রতি টুকরি ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেমাইয়ের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এক টুকরি সেমাই তৈরিতে গত বছর শ্রমিকরা ৯০ টাকা নিতেন। এখন নিচ্ছেন ১০০ টাকা। সেই সঙ্গে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। আশপাশের বাজারে গত বছর ভ্যানে চেপে সেমাই পাঠাতে প্রতি টুকরিতে খরচ পড়ত ২০ টাকা। বর্তমানে খরচ হচ্ছে ৩৫ টাকা। তাই বাংলা সেমাইয়ের দামও বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে প্রতি টুকরি সেমাইয়ে বেড়েছে ২০০ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কারখানার শ্রমিক বলেন, আমাগো কারখানাগুলোতে সেমাই তৈরির জন্য এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। দুই মাসের জন্য কারখানাগুলো সচল থাকে। ঈদ শেষে আবার এগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তখন রিক্সা বা ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি।জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লা উপপরিচালক আছাদুল ইসলাম, গত বছরও আমরা চাক্তাই এলাকায় গড়ে ওঠা এসব কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরির প্রমাণও পেয়েছিলাম।

তখন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছিল। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা এবারও বিষয়টি দেখব। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কুমিল্লার উপপরিচালক (সিএম) কে এম হানিফ বলেন, খোলা আকাশের নিচে সেমাই যাবে না। ফ্লোরে প্যাকেট করা যাবে না।

কাঠের টেবিলে প্যাকেট করতে হবে। নোংরা পরিবেশে উৎপাদন করা যাবে না।তিনি আরও বলেন, মোবাইল কোর্টে বিএসটিআই’র সিএম লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত লাচ্ছা সেমাই পণ্যের মোড়কে ‘বিএসটিআই’র স্ট্যান্ডার্ড মার্ক ব্যবহার করার অপরাধে মেসার্স কাশফুল ফুড প্রোডাক্টকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।