সারা দেশ

গরু বিক্রি নিয়ে খামারিরা শঙ্কায় দুশ্চিন্তায় ক্রেতারা

আর মাত্র কয়েক দিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল আযহা। আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কোরবানির পশু বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার খামারিরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। ক্রেতাদের কাছে কোরবানির পশু আকর্ষণীয় করে তুলতে যা যা করণীয় তাই করছেন খামারিরা। তবে গরু বিক্রি নিয়ে খামারিরা শঙ্কায় আছেন, তেমনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ক্রেতারাও। কারণ হিসেবে এ বছর গো-খাদ্যের দাম অত্যাধিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানি পশু প্রস্তুতিকরণে ব্যয় বেশী হয়েছে।

খামারিরা প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন বলে জানায় প্রাণী সম্পদ দপ্তর। প্রাণী সম্পদ দপ্তর অনলাইন পশু কোরবানির হাট হওয়াতে একটু সুবিধাও হয়েছে। ইদ উল আযহা উৎসব শুরু হবে, এখন পুরোদমে শেরপুরের কোরবানির হাট শুরু হয়েছে।উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে উপজেলার প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ এ পেশায় জড়িত রয়েছেন। খামারি ছাড়াও উপজেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি ইনকামের জন্য ঈদকে ঘিরে বাড়িতে একটি দুইটি করে গরু লালন পালন করেছেন। তারা কোরবানির সময় বিক্রয় করেন।

এবার উপজেলায় কোরবানির পশুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬৯ হাজার ৩২০। তবে খামারি ও প্রান্তিক কৃষক মিলে এবার প্রায় ৭২ হাজার ৯৬২টি পশু প্রস্তুত করেছেন। এতে প্রায় ৩ হাজার ৬৪২টি অতিরিক্ত রয়েছে।এর মধ্যে ২২ হাজার ৫৬৪টি ষাঁড়, বলদ ৭ হাজার ২৫৬টি, গাভি ৪ হাজার ২১৪টি, মহিষ ১৫৪টি, ছাগল ৩৫ হাজার ৩৫২টি, ভেড়া ৩ হাজার ৪২২টি প্রস্তুত রয়েছে। এই সব পশু প্রায় ৫শ ৭১ কোটি টাকা লেনদেন হবে।প্রাণী সম্পদ সূত্রে আরো জানা যায়, কোরবানি পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য শেরপুর পৌর শহরের বারোদুয়ারি, উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর ও ছোনকা, বিশালপুর ইউনিয়নের জামাইল, কুসুম্বী ইউনিয়নের বেলঘড়িয়া, খামারকান্দি ইউনিয়নের খামারকান্দিসহ উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ১ পৌরসভায় ১১টি স্থায়ী অস্থায়ী হাট বাজার রয়েছে।

এ সকল হাটে নিয়মিত পশু ক্রয় বিক্রয় চলছে।সরে জমিনে উপজেলার মান্দাইন গ্রামে অবস্থিত ‘সমতা ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্ম’ এর স্বত্বাধিকারী মনজুরে মওলা মিল্টন বলেন, গত ২ বছরের বেশি সময় হলো তিনি এই খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর আগে তার বাড়িতে ২০টি গরু লালন পালন করা হতো। সেখান থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে তার গরুর খামার করার পরিকল্পনা আসে। বর্তমানে তার খামারে বিভিন্ন প্রজাতির ৯৬টি পশু রয়েছে। এর মধ্যে দেশি গরু ৩০টি গরু, হোলস্টেইন ফ্রিজিয়ান ৪০টি এবং শাহীওয়াল গরু ২৬টি বর্তমানে খামারে রয়েছে তার। এছাড়া রয়েছে কয়েকটি মহিষও। তার খামারে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের গরু রয়েছে।

তিনি খামারের গরুগুলোকে ঘাস, ভুট্টা, ভুসি, সাইলেজ, খড়, দানাদার খাবার খাওয়ান।তিনি বলেন, দানাদার খাবারের এখন অনেক বেশি। শুধুমাত্র এই খাবারের উপর ভরসা করলে খামার টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। এজন্য নিজস্বভাবে ঘাস বা সাইলেজের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাহলে বর্তমান বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে গরু লালন পালন করা সম্ভব হবে।তিনি বলেন, এই গরুগুলোর কিছু ঢাকায় বিক্রি হবে। কিছু স্থানীয় হাটে। বেশির ভাগ বিক্রি হবে খামার থেকেই। এই ইদ উপলক্ষ্যে তিনি আশা করছেন তার খামারের ৯৬টি পশুর মধ্যে অন্তত ৬০ থেকে ৬৫টি পশু বিক্রি করতে পারবেন। যার মূল্য হবে প্রায় ৩ কোটি টাকা।

মনজুরে মওলা মিল্টন আরো বলেন, খাবার দাবারসহ সব কিছুর দাম বেশি হওয়ার কারণে এবার গরুর দামও বেশি। গত বছর এই গরু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই গরু এবার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারলে লাভ পাওয়া যাবে।খামারটির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খামারের একটি গরুতে প্রতি মাসে খরচ পড়ছে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। কোরবানির উপলক্ষ্যে এখন পর্যন্ত তিনি ৩টা গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, গত বারের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি হতেই হবে। না হলে আমার লোকসান হয়ে যাবে। কারণ খাবারের দাম অনেক বেশি। ভুট্টা, গম, গমের ভুসি, ধানের কুড়া এগুলোর দাম অনেক বেশি।

এছাড়া খামার পরিচালনা করতে গিয়েও আমাদের আরো খরচ হয়।তিনি আরো বলেন, গরুর আসলে কোন কিছু ফেলে দেওয়ার মতো না। গোবরও বিক্রি করা যায়। এর জন্য গরুর গোবরগুলো এক জায়গায় জমানো হয়। পরে সেখান থেকে মাছ চাষি এবং জমি চাষিরা কিনে নেন। এগুলো তো আর মেপে বিক্রি করা হয় না। স্তুপের উপর নির্ভর করে দাম।মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেকেই গরু কেনার পর রাখার জায়গা, খাবার এবং পরিচর্যা নিয়ে সমস্যা পড়েন। তবে আমাদের কাছ থেকে কেউ গরু কিনলে আমার খামারেই রাখতে পারবে। আমি এখন যেভাবে খামারে গরু লালন পালন করছি। সেভাবেই বিক্রি হয়ে যাওয়া গরুটিকেও লালন পালন করবো।

ক্রেতারা চাইলে আমরা ঈদের আগের দিন তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবো।উপজেলার শেরুয়া এলাকার খামারি জাহাঙ্গীর আলম জানান, ধান চালের ব্যবসার পাশাপাশি আমি গরুর খামার করেছি। আমার খামারে ৩৫টি কোরবানির গরু প্রস্তুত রয়েছিল। এর মধ্যে দশটি গরু বিক্রি হয়েছে আর ২৫টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ভারত থেকে গরু না আসলে আশা করি ভালো দাম পাব।উপজেলার হাজিপুর এলাকার খামারি শাওন জানান, আমার খামারে একটি ৩৮ মন ওজনের গরু রয়েছে। যার দাম চাওয়া হচ্ছে ৩৫ লক্ষ টাকা। গরুটি আমি পাঁচ বছর ধরে লালন পালন করে আসছি। শকের বসতে আমি এই গরুটি বড় করেছি। গরুর নাম দিয়েছি বাংলার রাজা।

শেরপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রেহানা খাতুন বলেন, আমরা সারা বছর খামারিদের কীভাবে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে গবাদি পশু পালন করে হৃষ্টপুষ্ট করা যায় সেই বিষয়ে আমরা পরামর্শ দিয়ে আসছি। দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছি। ইতোমধ্যে আমরা প্রাণী সম্পদ দপ্তর থেকে ১১টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। প্রতিটি স্থায়ী অস্থায়ী হাটে এই টিমটির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। হাটে হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কি ধরনের মেজারমেন্ট নেবে, খাওয়া দাওয়ার বিষয়টি দেখবে। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা যেমন হাটে নিয়ে আসার পর কোনো পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসা দেবে। এছাড়া হাটে নিয়ে আসা পশু অসুস্থ কিনা সেটা যাচাই করবে।

%d bloggers like this: