জাতীয়

জিম্মি নাবিকরা যেসব দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের শুরুর দিনগুলো দুর্বিষহ কাটলেও এখন তারা অনেকটা ‘স্বাধীন’। জাহাজে চলাচলে নেই কোনো বাধা। চাইলে করতে পারছেন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ। তবে রেশনিং করে খাবার খেয়ে রাখছেন রোজা। করছেন ইফতারি। এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ ও নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জিম্মি নাবিকদের বিষয়ে কথা বলেছেন কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।তিনি বলেন, ‘শুরুর দিনগুলোয় নাবিকদের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে দস্যুরা। তবে বর্তমানে তারা জাহাজে স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করছে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আমরা দস্যুদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি ঈদের আগে সুখবর দিতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জাহাজে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি রয়েছে। তবে খাবারে যাতে সংকট না হয়, এ জন্য নাবিকরা রেশনিং করে খাচ্ছেন।

জানা যায়, জিম্মি করার পর নাবিকদের গাদাগাদি করে একটি কেবিনে বন্দি রাখা হয়েছিল। কখনো তাদের রাখা হয় জাহাজের ব্রিজে। চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। দস্যুদের নির্ধারিত সময়ে পরিবার-পরিজন ও জাহাজ মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ হতো। কিন্তু তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা শুরুর পর পাল্টে যেতে থাকে জাহাজের সার্বিক পরিস্থিতি। নাবিকদের দেওয়া হচ্ছে জাহাজে ‘স্বাধীনতা’।

জাহাজে থাকা কয়লার তাপ ও অক্সিজেন লেভেল মনিটরিংসহ অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে যথানিয়মে। নাবিকরা এখন নিজ নিজ কেবিনে অবস্থান করছেন। পরিবার-পরিজন ও জাহাজ মালিকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে পারছেন। চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলামের তৈরি করা খাবার খেয়ে রোজা রাখছেন ও ইফতারি করছেন। শুরুর দিনগুলোয় জাহাজের মজুত খাবারে দস্যুরা ভাগ বসালেও এখন তারা নিজেদের খাবার নিজেরাই বাইরে থেকে আনছে।

জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ভাই আবদুন নুর খান আসিফ বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি নাবিকদের একটু ফ্রি মুভমেন্ট করতে দিচ্ছে। জাহাজের নিয়মিত কাজগুলোও করতে দিচ্ছে।মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজে খাবার ও পানির কোনো সংকট নেই। সংকট তৈরি হলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে খাবার পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। অনেকে মনে করছেন ইইউ নেভাল ফোর্স ও পাল্টল্যান্ড পুলিশের তৎপরতা শুরুর পর থেকে চাপে আছে জলদস্যুরা। ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি হওয়ায় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভালোই অগ্রগতি হচ্ছে আলোচনা। এখন চলছে দরকষাকষি।

আশা করা যায় ঈদের আগেই নাবিক ও জাহাজ জলদস্যুমুক্ত হবে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই জাহাজের এক নাবিকের স্বজন যুগান্তরকে বলেন, জাহাজ জিম্মি করার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ফুরিয়ে এসেছে। প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য এক ঘণ্টা পানি দেওয়া হচ্ছে। ওয়াশ রুমে ব্যবহার করতে হচ্ছে সাগরের পানি। ৪-৫ দিন পর একবার গোসল করতে দেওয়া হচ্ছে। যারা বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন তারা ছাড়া অন্য নাবিকদের এক কেবিনেই গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে।

একদিকে প্রতিদিন গোসল করতে না পারা, অন্যদিকে গাদাগাদি করে রাখার কারণে প্রায় প্রত্যেক নাবিকের চর্মরোগজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় তারা বেশ অস্বস্তিতে আছেন।জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ইসরাত জাহান যুগান্তরকে বলেন, ‘৪-৫ দিন গোসল না করলে যে কোনো মানুষ ইম্পেটিগো বা ত্বকে খোসপাঁচড়া হতে পারে। শরীরের ঘাম থেকে ব্যাকটেরিয়াজনিত দাদ রোগে ভুগতে পারেন। তাছাড়া এ ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা অন্যরাও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজে ২৩ নাবিক রয়েছেন, যাদের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং করপোরেশনের।

আরও খবর

Sponsered content

%d bloggers like this: