20 March 2024 , 3:04:20 প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের আট বছর পূর্ণ হলো আজ বুধবার (২০ মার্চ)। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এ অবস্থায় বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তনুর বাবা-মা।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের জঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।
পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল
তনু হত্যা মামলায় গত আট বছরে পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে। প্রথমে ২০১৬ সালের ২১ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলামকে। চার দিন পর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি এ কে এম মনজুর আলমকে। একই বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম ২৩ আগস্ট পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। পরে ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামাকাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিন জন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিন জনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর মামলাটি সিআইডি থেকে পিবিআইয়ের ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়।
তদন্ত কতো দূর
দায়িত্ব পাওয়ার শুরুর দিকে পিবিআই ঢাকার একটি টিম কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ঘুরে যান। এরপর পিবিআই তিনবার কুমিল্লায় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও ভাই আনোয়ার হোসেন ওরফে রুবেলের সঙ্গে কথা বলে। পিবিআই ২০২০ সালের নভেম্বরের পর তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি। এরপর ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট তনুর খালাতো বোন লাইজু জাহানের সাক্ষ্য নেওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। নির্ধারিত সময়ে তনুর মা-বাবা ও ভাইসহ লাইজু জাহান কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ে হাজির হওয়ার পর তাদের জানানো হয় তদন্ত কর্মকর্তা অসুস্থ তাই সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে না।
হতাশ তনুর বাবা-মা
৮ বছরেও মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে তনুর মা আনোয়ারা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি আর বিচার চাই না। বিচার চেয়ে কী লাভ? গরিবের ওপর জুলুমের বিচার হয় না। এ বছর তনুর বাবার চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। এরপর আমরা এখান থেকে চলে যাব। মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়েই এক বুক দুঃখ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।তিনি বলেন, পিবিআই ঢাকায় বসে বসে বক্তৃতা দেয়।
আমাদের ডেকে পাঠিয়ে উল্টো হয়রানি করে। আমরা গরিব তাই বলে কারও গোলাম না যে যার কারণে মেয়ে হত্যার বিচার পাবো না। তনুকে অনেক কষ্ট করে লালন-পালন করেছি। কী বেদনা নিয়ে বেঁচে আছি, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। কলিজার টুকরাটা কবরে। তাকে ছাড়া কীভাবে ঈদ করবো? এ হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি দুনিয়ায় না হয়, আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম। আল্লাহর বিচার বড় বিচার।
মেয়ের হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষুব্ধ তনুর বাবা ও মামলার বাদী ইয়ার হোসেন। তিনি বলেন, পিবিআই তো দেখাই করে না। আট বছর হলো মামলা দিছি। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে রহস্য বের হতো, তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। পরিবারের প্রতিটি সদস্য ও আত্মীয়স্বজন এমনকি শিক্ষকরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন, আর কি বাকি রইল? পুরো দেশবাসী তনু হত্যার বিচার চায়।
যা বলছেন তদন্ত কর্মকর্তা
বাদির সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্তে প্রয়োজনী তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, বাদীর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি না। কিন্তু ঘটনাস্থলে যাই; তথ্য সংগ্রহ করি। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্তের কাজ চলছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা আসামিদের শনাক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
তবে এখনো তাদের শনাক্ত করতে পারিনি।পিবিআই পরিদর্শক বলেন, মামলাটির তদন্তে গত বছর একাধিকবার ঘটনাস্থল দেখা হয়েছে। তনুর পরিবার ছাড়াও অনেকের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্তে বেশ কিছু অগ্রগতি আছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সবকিছু কালেক্ট করা হয়েছে।