Uncategorized

এক আজব অসুখ মুড সুইং

‘মুড সুইং’ বা সোজা বাংলায় মেজাজ পরিবর্তন। একমুহূর্তে ভালো তো পরমুহূর্তে হঠাৎই খারাপ। হ্যাঁ, একেই বলা হয় ‘মুড সুইং’। মন ভালো খারাপের রাস্তায় ঘুরপাক খাওয়া, এমনকি তা নিজেও বুঝতে না পারা। সাধারণত বেশিরভাগ নারী শিকার হন এই মুড সুইং-এর। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো আমরা অনেকে জানিই না আসলে এই ‘মুড সুইং’ কি?

অনেকে তো আবার অনায়াসেই একে ‘নাটক’ বলে অভিহিত করে ফেলেন।’মুড সুইং’ নিয়ে আমাদের জ্ঞান একদমই তলানিতে। যার কারণে আমরা মুড সুইং এর বিষয়টিকে খুব একটা আমলে নেই না। বরং ‘মুড সুইং ‘এর জন্য অনেক সময় অনেককে বুলিং এর শিকার হতে হয়। এতে করে যিনি মুড সুইং এর শিকার হয়েছেন তিনি আরো মানসিক অস্বস্তির দিকে ধাবিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে যা অভিশাপ হয়েও দাঁড়ায়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আশেপাশের লোকজন তাদের এমন আচরণে বিরক্ত হয়ে খারাপ আচরণ করে। আশেপাশের কোনো মেয়েকে বিনা কারণে হঠাৎই রেগে যেতে দেখলে, কান্না করতে দেখলে, চিৎকার করতে দেখলে অনেকেই একে ‘নাটক’ বলে হেসেই উড়িয়ে দেন।আবার অনেকে ‘নাটক’ বলে অভিহিত না করলেও মুড সুইং এর শিকার মেয়েদের সহজেই মানসিক অসুস্থ বলে আখ্যা দিয়ে দেন।

এতে তাদের মানসিক সমস্যা গুরুতর হতে পারে। কারণ ‘মুড সুইং’ এর সময় সে নিজেও বুঝতে পারে না তার কি চাই, কিছুক্ষণ পর হয়তোবা তার মুড ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু কিছু সময়ের জন্য যদি কেউ ওভার রিয়্যাক্ট করে ফেলে তাহলে নতুন করে তার মানসিক বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। এমনকি ‘মুড সুইং’ এর এই সময়টাতে অনেকে আত্মহত্যার দিকেও ধাবিত হতে পারে।

আর এ সবকিছুর কারণ, ‘মুড সুইং’ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানহীনতা কিংবা স্বল্প জ্ঞান। তাই চলুন ‘মুড সুইং’ সম্পর্কে একটু জেনে আসা যাক।

মুড সুইং এর কিছু লক্ষণ

* হঠাৎই মেজাজ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া।
* অতিরিক্ত সুখ বা দুঃখ বোধ তৈরি হওয়া।
*খিটখিটে মনোভাব ।
* সামান্য কারণে রাগ উঠা ।
* অল্পতেই কান্না করা ।
* অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা ।
* উদ্বিগ্ন ভাব ।
* পর্যায়ক্রমিক বিষাদ ও রাগ।
* ঘুমোতে অসুবিধা, শরীরে ক্লান্ত ভাব আসা।

কেন হয় এই মুড সুইং?

নারীরা জীবনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। বিভিন্ন পর্যায়ের এই ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কারণে ‘মুড সুইং’ তারা বেশি অনুভব করে থাকেন। এর মধ্যে প্রধান একটি কারণ বলা যায় প্রতিমাসে ‘পিরিয়ড ‘। এই সময়টাতে অধিকাংশ নারী ‘মুড সুইং’ এর শিকার হয়।

পিরিয়ড হওয়ার দুএক সপ্তাহ আগে থেকে অনেকের আবেগের পরিবর্তন, খাবারের চাহিদায় পরিবর্তন, দুর্বলভাব, বমি বমি ভাব, মানসিক উদ্বেগ দেখা দিয়ে থাকে। পিরিয়ডের আগে এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় বলেই মানসিক অবস্থার এমন নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। সাধারণত বেশিরভাগ নারীর পিরিয়ড শেষ হওয়ার দু-একদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়।

তবে, কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে এ সমস্যা দীর্ঘায়িত হয়। যা দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের মানসিক স্বস্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট করে। অনেকে এর ফলে স্থায়ীভাবে মারাত্মক হতাশা, সব সময় মেজাজ খিটমিট করা, রাগারাগি করার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর হরমোন ওঠানামার প্রভাবে মুড সুইং এর শিকার হন। মূলত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হরমোনের তারতম্যের কারণেই মুড সুইং এর সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও কাজের চাপ, মানসিক চাপ-অশান্তি, খাদ্যাভ্যাস, বিশ্রাম ইত্যাদি কারনেও মুড সুইং হয়ে থাকে।হঠাৎই যদি কখনো দেখতে পান কোনো কারণ ছাড়া আপনার বোন, মা, বান্ধবী কেউ অদ্ভুত ব্যবহার করছে তবে তার আচরণকে ‘নাটক’ বলে আখ্যা না দিয়ে তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন।কারণ ‘মুড সুইং’ মেজাজের এমন এক নাটকীয়তা যা কারো জীবনে যেকোনো সময় অভিশাপ হয়েও আসতে পারে!

%d bloggers like this: