রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিপাকে ধানের শীষের সাবেক এমপি

গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর নিজ দলে শাস্তির মুখে পড়লেন ধর্মভিত্তিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর নেতা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, যিনি ২০০৫ সালে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) আলোচিত সেই সাক্ষাতের পরদিন শুক্রবার (২৪নভেম্বর) জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাহীনুর পাশার দলীয় পদ স্থগিতের কথা জানানো হয়।

সেখানে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময় দলের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহীনুর পাশা চৌধুরী দলের কোনো কোনো ব্যক্তিকে দলীয় সিদ্ধান্ত এবং অবস্থানের বিপক্ষে আসতে প্ররোচিত করেছেন যা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী। যেহেতু দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী তার এসব আচরণ দ্বারা দলের নীতি-আদর্শ ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাই তার প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলীয় সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত থাকবে।জমিয়তের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, আমরা তদন্ত করে বেশ কিছু ঘটনা পেয়েছি। তাই আপাতত সদস্যপদ স্থগিত করেছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কার্যনির্বাহী বৈঠকে আলোচনা করে নেওয়া হবে।

আগের রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করাকে কি শৃঙ্খলাবিরোধী তৎপরতা বলছেন?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “পার্টিকুলারলি সেটি নয়। সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম আরও কিছু বিষয় আছে। আমরা তদন্ত করে তার কিছু প্রমাণও পেয়েছি।জমিয়তের এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হল, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। এই অবস্থানের মধ্যে শাহীনুর পাশার বিরুদ্ধে দলের অন্য নেতাদের প্ররোচিত করার যে বক্তব্য বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়েছে, তাতে ভোটে আসার কথা বোঝানো হচ্ছে কি না- এই প্রশ্নে আফেন্দী বলেন, “এটা আমাদের দলীয় বিষয়। আপাতত বাইরে কিছু বলতে চাইছি না।

আগের দিন সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নয়টি ইসলামী দলের ১৪ জন নেতা। তাদের মধ্যে শাহীনুর পাশা চৌধুরী ২০০৮ সাল থেকে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে দুইবার বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন, ২০১৪ সালে ভোটও বর্জন করেছেন।বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের উপনির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে জেতেন শাহীনুর পাশা।

১৯৯৯ সালে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে কওমি মাদ্রাসকেন্দ্রিক ইসলামী ঐক্যজোট যে মোর্চা গঠন করে, সেই ঐক্যজোটের একটি দল ছিল জমিয়ত।পরে ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তবে জমিয়তের একটি অংশ এখনও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছে।

শাহীনুর যে অংশের নেতা, সেই অংশটি ‘ইসলামী সমমনা দলসমূহ’ নামে একটি মোর্চার অংশ। এই মোর্চা ভোটে যাওয়ার বিপক্ষে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এই মোর্চার কয়েকটি দলও ছিল।তাহলে আপনারা ভোটে যাচ্ছেন না?- এই প্রশ্নে জমিয়তের মহাসচিব আফেন্দী বলেন, “আপাতত এই সিদ্ধান্ত।”

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কী আলোচনা?

গণভবনের ওই বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে গণমাধ্যমকে পাঠনো বার্তায় বলা হয়, “এ সময় জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন।

একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য তারা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসাও করেন নেতৃবৃন্দ।

প্রতিনিধিদল শেখ হাসিনাকে একটি ক্যালিগ্রাফি উপহার দেয় বলে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে।

কী বলছেন শাহীনুর পাশা

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসার পরপর শাহীনুর পাশা চৌধুরী তার ফেইসবুক পেজে লেখেন, “পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় প্রকাশ নয়টি ইসলামী দলের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ। আমার সাক্ষাৎটি ছিল ব্যক্তিগত, দলীয় নয়।”

দলীয় সদস্যপদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত আসার পর তিনি আবার পোস্ট দেন ফেইসবুকে। এবার তিনি লেখেন, “গতরাতে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইসলামী নয়টি দলের সাক্ষাতে জমিয়তের নামটিও মিডিয়ায় এসেছে। আর তাতে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং জমিয়তপ্রেমীরা মনে কষ্ট পেয়েছেন।

আমার বক্তব্য কাল রাতেই পরিষ্কার করেছি। এটা আমার প্রিয় দল জমিয়তের প্রতিনিধিত্ব নয়, সাক্ষাৎটি আমার ব্যক্তিগত।শাহীনুর পাশা লেখেন, যার সহযোগিতায় গণভবনে গিয়েছি, তিনিই আমাকে একদিন আগে বলেছেন, জমিয়ত নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল। সুতরাং ওখানে আমি জমিয়ত নেতা হিসেবে যাইনি।

আমার মামলাগুলো উইথড্র করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে গিয়েছিলাম।দেশের ‘সুপ্রিম অথরিটির কাছে’ যে কেউ সুযোগ পেলে তার আবদার পেশ করার জন্য যাওয়ার অধিকার রয়েছে মন্তব্য করে তিনি লেখেন, এরপরেও যারা কষ্ট পেয়েছেন, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অতীতে আরো চারবার সাক্ষাৎ হয়েছে জানিয়ে ধানের শীষের সাবেক এমপি বলেন, ওই সাক্ষাৎকারগুলোর দলনেতা ছিলেন যথাক্রমে মাওলানা মুহি উদ্দীন খান রহ. মাওলানা মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ, মাওলানা মুফতি ওয়াক্কাস রহ.।

তিনি যে তিনজনের নাম উল্লেখ করেছেন, তাদের মধ্যে মুফতি আমিনী ও মুফতি ওয়াক্কাস ২০০১ সাল বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।