বাণিজ্য

মার্জিন ঋণে শেয়ারবাজারে আবারও গলার কাঁটা হতে যাচ্ছে

দেশের শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইসের (নিম্নসীমা) কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। কিন্তু ঋণের সুদ বাড়ছে। ফলে যেসব বিনিয়োগকারী ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন, তারা সবচেয়ে বিপদে। সমস্যায় রয়েছে ঋণ দেওয়া মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোও। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উভয় পক্ষকেই নিঃস্ব করছে মার্জিন ঋণ। দিনদিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। যার ফলে বাজারের জন্যও বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে মার্জিন ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। বিভিন্ন সময়ে বাজার অতিমূল্যায়িত হওয়ার ক্ষেত্রেও এই ঋণ দায়ী। কারণ, মৌলভিত্তির বাইরে দুর্বল কোম্পানিতেও ঋণ নিয়ে কারসাজি হয়।এদিকে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে তারা উচ্চ সুদে মার্জিন ঋণ নিরুৎসাহিত করছে। এই ঋণ বাজারে উপকারের চেয়ে ক্ষতি করে বেশি। আর বাংলাদেশের মতো দুর্বল বাজারের জন্য এটি মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রসঙ্গত, গ্রাহককে শেয়ার কিনতে মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজ থেকে যে ঋণ দেওয়া হয়, একে মার্জিন ঋণ বলে। গ্রাহককে দেওয়া ঋণের অর্থও আবার সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ অন্য কোনো উৎস থেকে ঋণ হিসাবে নেয়। ফলে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ ফেরত না পেলেও তাদেরকে ওই ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ কারণে দাম কমে গেলে গ্রাহকের শেয়ার তারা ফোর্সড সেল (বাধ্যতামূলক বিক্রি) করে। বর্তমানে মার্জিন ঋণের এই হার ১ : ০.৮। এর অর্থ হলো কোনো গ্রাহকের ১০০ টাকা থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ থেকে আরও ৮০ টাকা ঋণ নেওয়া যাবে। যদিও বর্তমানে এই মাত্রা তুলনামূলকভাবে কিছুটা সহনীয়।

কিন্তু ২০১০ সালে গ্রাহকের বিনিয়োগের বিপরীতে দশগুণ পর্যন্ত ঋণ দিয়েছিল বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ। এর ফলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা পুরো দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘমেয়াদে মার্জিন ঋণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক নয়। কারণ, এই ঋণের সুদ বেশি। বিশ্বব্যাপী এই ঋণ নিরুৎসাহিত করা হয়। তিনি বলেন, ২ থেকে ৮ অক্টোবর বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহ পালন হবে। সেখানে আমরা বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণের মতো উচ্চ সুদে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করব।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বাজারে মার্জিন ঋণের পরিমাণ কত তা বলা কঠিন। কারণ, প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের অ্যাসোসিয়েশনকে এ তথ্য দেয় না। তবে ব্রোকারেজ হাউজ এবং মার্চেন্ট ব্যাংক উভয় প্রতিষ্ঠান বিএসইসিতে এ বিষয়ে রিপোর্ট করে।শেয়ারবাজারে লেনদেন করছে-বতর্মানে এমন ব্রোকারেজ হাউজের সংখ্যা ২৪০টি। এর মধ্যে গ্রাহককে মার্জিন ঋণ দিয়েছে-এমন হাউজের সংখ্যা ১০০টির মতো। মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। সামগ্রিকভাবে ঋণের হার গ্রাহকের বিনিয়োগের ১৫ শতাংশের মতো।

তবে মোট ঋণের ৬০ শতাংশই শীর্ষ দশটি হাউজে। অন্যদিকে ২০১০ সাল থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মার্জিন ঋণে বিনিয়োগকারীরা। ওই সময়ে ঋণ নিয়ে যারা বিনিয়োগ করেছিল, তাদের সব পুঁজি হারানোর পরও হাউজগুলো তাদের কাছে টাকা পাবে। সেই টাকার বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যে নতুন ঋণ আরও বাড়ছে।শেয়ারবাজারে লেদদেনযোগ্য বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৭ লাখ ৫০ হাজার। এসব বিও অ্যাকাউন্টে মোট শেয়ার সংখ্যা ৯ হাজার ৬৮১ কোটি। আর এসব শেয়ারের সর্বশেষ বাজারমূল্য ৩ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। যদিও বর্তমানে বাজারমূল্যের তুলনায় মার্জিন ঋণ অনেক। কিন্তু শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় সুদ ও আসল মিলিয়ে দিনদিন ঋণের অঙ্ক বাড়ছে।