10 December 2024 , 4:38:24 প্রিন্ট সংস্করণ
কুমারখালীতে প্রতি বছরই বাড়ছে অবৈধ ইটের ভাটা আইন কানুন যেন তাদের কাছে অসহায়। অবৈধ ইটভাটায় মালিকদের কাছে অসহায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা জুড়ে জনপদের খুব কাছাকাছি অথবা ফসলি জমিতে ইটভাটার সংখ্যা বেড়ে চললেও সেদিকে নজর নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, অবৈধ ভাটা চিহ্নিত করতে। যেভাবে অভিযান পরিচালনা করা জরুরি তা করে না পরিবেশ অধিদফতর। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালিত হলেও অবৈধ কোনো ইটভাটাই বন্ধ হয় না। বরং অভিযানের পর সেগুলো আগের মতো নিয়ম ভেঙ্গে চলতেই থাকে। গত বুধবার কুমারখালী চর সাদীপুর ইউনিয়নে তিন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব, আনছার, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ অন্তত ৬০ জনের একটি সজ্জিত দল যাচ্ছিলেন অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে।
তবে তাঁরা কোনো একটি ইটভাটায়ও পৌছাতে পারেননি। তাঁদেরকেই পথেই আটকে দিয়েছেন অবৈধ ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা। পথে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ থাকার পর সাদা কাগজে শুধু ভাটা মালিকদের মুচলেকা নিয়ে কোনমতে প্রাণ নিয়ে ফিরে গেলেন প্রশাসনের এই সজ্জিত দলটি। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের অজুহাত হলো জনবল সংকট। কুমারখালী উপজেলাতে ৭৯ টি ইটের ভাটা রয়েছে তার মধ্যে ৭০ টি অবৈধ। মাত্র ৯ টি বৈধ ভাটা রয়েছে বলে জানা যায়। কুমারখালী উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়নে রয়েছে ৩০ টির অধিক অবৈধ ইটের ভাটা ও যদুবয়ারা ইউনিয়নে কেশবপুর এক গ্রামেই রয়েছে ১০ টা ইটের ভাটা । স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইটভাটার মালিকরা বছর পর বছর ধরে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই কৃষি জমিতে ইট পুড়িয়ে আসছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি জমিতে ইটখোলা স্থাপনের কারণে তারা এখন ফসল ফলাতে পারছেন না। তাদের জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া, আবাসিক এলাকায় ইটখোলা স্থাপনেরও অভিযোগ করেন তারা। ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদফতর অভিযানে নেমে ভাটাগুলোকে জরিমানা করলেও পরের দিন থেকেই ফের চলতে থাকে পরিবেশ দূষণকারী এসব ইটভাটা। জানা গেছে, কুষ্টিয়া কুমারখালী আশপাশের বেশির ভাগ এলাকাতে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। শীতের এই মৌসুমে ইট তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি। পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, ইট পোড়ানো জ্বালানির কারণে বায়ু, পানি ও তাপদূষণ ঘটছে- যা নিয়ন্ত্রণের সদিচ্ছা নেই সরকারের। এতে করে বৃক্ষ যেমন নিধন হচ্ছে তেমনই আবাদযোগ্য জমির উপরিভাগ কেটে ফেলায় ফসলি জমি হারাচ্ছে তার উর্বর শক্তি।
পরিবেশ বাদীদের মতে, ইটভাটার জন্য আইন আছে, সেই আইনের দুর্বলতার ফাঁকে এটা করা হয়ে থাকে। আমরা চাই, জরিমানা না, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হোক। কিন্তু সরকার বলবে উন্নয়নের বিষয় বন্ধ না করে সংশোধন করা দরকার। ইচ্ছা করলে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো হয় ইচ্ছাকৃত, নাহলে পরিস্থিতির কারণে, কিংবা চাপে পড়ে করা হয়। কিন্তু সরকার এগুলোর বিরুদ্ধে চাইলে কাজ করতে পারে। তা না-করে তাদের এক ধরনের গাফলতি আছে। ইচ্ছে করলেই এটি নিয়ন্ত্রণে এনে সমাধান করা সম্ভব। এই বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক হাবিবুল বাসার বলেন, ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ (সংশোধনী ২০১৮) অনুযায়ী ভাটা গুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। জনবল ঘাটতির কারণে অনেক সময় আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে পারিনা।