বাণিজ্য

বাড়ছে ব্যাংক ঋণের সুদহার ডিসেম্বর মাসেও

ধারাবাহিক ঋণের সুদহার বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে এমন সিদ্ধান্ত। ফলে চলতি বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে পর ডিসেম্বর মাসেও বাড়ছে ব্যাংক ঋণের সুদহার। চলতি মাসে ভোক্তা ঋণের সুদহার হবে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ।যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, তা হলো ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ তথা– সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত।

প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২০ শতাংশ এবং অক্টোবরে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সবশেষ নভেম্বরে স্মার্ট রেট বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৭২ শতাংশে।বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, অক্টোবর মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে এখন সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ডিসেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক।

অন্যদিকে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ করতে পারে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অবশ্য একবার সুদহার কার্যকর করা হলে পরবর্তী ছয় মাসে তা আর পরিবর্তন করা যায় না।নভেম্বরে মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ডিসেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সেই হিসেবে, চলতি ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর কৃষি ও পল্লি ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ সুদ নিতে পারবে।

গতমাসে অর্থাৎ নভেম্বরে বড় অংকের ঋণে সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ, প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং কৃষি ও পল্লি ঋণের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে ডিসেম্বরে ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে ব্যাংক নিতে পারবে ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ সুদ। কারণ সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নেওয়া সুযোগ রয়েছে। যা আগের মাস নভেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

ব্যাংকের ক্ষেত্রে শুধু ঋণে সর্বোচ্চ সীমা থাকলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত সংগ্রহেও সুদহারের একটা সর্বোচ্চ সীমা দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ যোগ করে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এনবিএফআই। সেই হিসেবে ডিসেম্বর মাসে তাদের সর্বোচ্চ ঋণের সুদহার হবে ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং আমানতে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তবে ডিসেম্বরে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গত জানুয়ারিতে স্মার্ট ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এরপর প্রতি মাসে একটু করে বেড়ে গত মে মাসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। জুন ও জুলাইয়ে সামান্য কমে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে নামে। এরপর আগস্ট থেকে ধারাবাহিক সুদহার বাড়ছে।

%d bloggers like this: