সারা দেশ

মেয়েকে সহায়তা করায় মোমেনাকে হত্যা করে ছেলের বউ ও নাতি

মেয়ের সংসারের আর্থিক অনটনের কারণে নিজের জমি বিক্রি করে টাকা দেওয়া কাল হয়েছিল বৃদ্ধা মোমেনা বেওয়ার। তাই নিজের মৃত ছেলের বউ ও নাতি মিলে হত্যা করেছিল তাঁকে। কিন্তু হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বৃদ্ধা মোমেনার মৃতদেহ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্তরা।

ময়নাতদন্তে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও থানা পুলিশ ও সিআইডি ঘটনার কোনো কিনারা করতে পারেনি।এরপর পিবিআই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায়। সাত বছর পর বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য। গ্রেপ্তার হন অভিযুক্ত ছেলের বউ ও নাতি।সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান সিরাজগঞ্জ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার দহকুলা দক্ষিণপাড়ার মৃত আব্দুল মান্নানের স্ত্রী রিনা খাতুন ওরফে নাজমা খাতুন (৫৫) ও তার বড় ছেলে আব্দুর রাজ্জাক রনি।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, নিহতের সংসারে এক ছেলে ও আট মেয়ে ছিল। স্বামী আব্দুল গনি মারা যাওয়ার পর থেকে ৭০ বছর বয়সী মোমেনা বেওয়া ছেলের সঙ্গেই থাকতেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর ছেলে আব্দুল মান্নানও মারা যান।মোমেনা বেওয়া ছেলের বিধবা স্ত্রীর সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন।

এ অবস্থায় ২০১৬ সালের ২৭ মে সন্ধ্যায় মোমেনা বেওয়ার মৃত্যু হয়।সংবাদ পেয়ে গলায় শাড়ি পেঁচানো অবস্থায় তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। পরবর্তী সময়ে ময়নাতদন্তে মোমেনাকে শ্বাসরোধে হত্যার প্রমাণ মেলে। এ ঘটনায় নিহতের আরেক মেয়ের (নাতি) ছেলে আমিরুল ইসলাম বাবু বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো দু-তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মোমেনা বেওয়া নিজ নামীয় জমি বিক্রি করে মেয়ে সালমা খাতুনকে টাকা দেওয়ায় অভিযুক্তদের সঙ্গে মনোমালিন্য হয় এবং তারা ভিকটিমকে প্রতিনিয়ত গালিগালাজ করতে থাকে। এ ছাড়া ছেলের বিধবা বউয়ের পরকীয়া সম্পর্ক জেনে যাওয়ার কারণেই তাকে হত্যা করে মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, উল্লাপাড়া থানা পুলিশের তদন্ত চলাকালে সাত মাস পর সিআইডি মামলাটি অধিগ্রহণ করে। তারা চার বছর মামলাটির তদন্ত শেষে কোনো আসামি শনাক্ত ছাড়াই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। এরপর বাদী নারাজি দিলে আদালত পিবিআইকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেন।পিবিআইয়ের এসআই সোহেল রানা মামলাটির তদন্তকালে নিহতের বড় নাতি আব্দুর রাজ্জাক রনিকে গ্রেপ্তার করলেও সে কোনো তথ্য না দেওয়ায় হত্যার রহস্য অধরাই থেকে যায়।

এ অবস্থায় চলতি মাসের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে পলাতক থাকা অবস্থায় নিহতের ছেলের বিধবা বউ রিনা খাতুন ওরফে নাজমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে আদালতে হাজির করা হলে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।