2 September 2024 , 12:36:26 প্রিন্ট সংস্করণ
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের আসল মালিক আল্লাহ। যদি মানুষ তার আসল মালিককে ভুলে যায়, তার আদেশ-নিষেধ অমান্য করে, তাহলে তার মালিক তার প্রতি শুধু অসন্তুষ্টই হন না, বরং তাকে শাস্তি দিতে বাধ্য হন। তবে আল্লাহ তাআলা যেহেতু অতিশয় মেহেরবান ও দয়াময়, তাই তিনি তাৎক্ষণিক শাস্তি প্রয়োগ করেন না। তিনি অবকাশ দেন, বারবার সুযোগ দেন। কোনো জাতি যখন সম্মিলিতভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ ছেড়ে দেয়। ব্যস্ত থাকে কেবল নিজেকে নিয়ে।
তখন সে জাতির ওপর বিপদ অত্যাসন্ন হয়ে কোনো জাতি যখন সম্মিলিতভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ ছেড়ে দেয়। ব্যস্ত থাকে কেবল নিজেকে নিয়ে। তখন সে জাতির ওপর বিপদ অত্যাসন্ন হয়ে মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়। পাপিষ্ঠ ফেরাউনকে আল্লাহ তাআলা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
হে মুসা! তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে। (সুরা ত্বাহা ২৪) নমরুদকে আল্লাহ তাআলা তখনই শাস্তি দিয়েছেন, যখন সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছে। অনুরূপভাবে আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
কোনো জাতি যখন সম্মিলিতভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ ছেড়ে দেয়। ব্যস্ত থাকে কেবল নিজেকে নিয়ে।
তখন সে জাতির ওপর বিপদ অত্যাসন্ন হয়ে পড়ে। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু জাতির পতন ও চূড়ান্ত ধ্বংস ডেকে এনেছে এই কর্তব্য কাজে অবহেলা। আল্লাহ বনী ইসরাইল সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেছেন, كَانُواْ لَا يَتَنَاهَوۡنَ عَن مُّنكَرٖ فَعَلُوهُۚ لَبِئۡسَ مَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ তারা যে-সব গর্হিত কাজ করত তা হতে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত তা কতই না নিকৃষ্ট। (সুরা মায়িদা ৭৯)
ন্যায়ের পথে ডাকা আর অন্যায়ে বাধা দেবার এই কাজটি চালিয়ে যেতে হয় ব্যক্তি থেকে সমাজ এবং সমাজ থেকে রাষ্ট্র ও বিশ্ব পর্যায়ে। যারা সুশাসক, ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্রপরিচালক তারা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অন্যের মতকে অবদমিত করেন না। তারা অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন। অন্যের সদুপোদেশকে অর্ঘ ভেবে বুকে তুলে নেন। এতে করে তারা যেমন আল্লাহর প্রিয় হন, রাষ্ট্রও তেমন উপকৃত হয়। জনগণ থাকেন শান্তিতে।
لَہٗ مُعَقِّبٰتٌ مِّنۡۢ بَیۡنِ یَدَیۡہِ وَمِنۡ خَلۡفِہٖ یَحۡفَظُوۡنَہٗ مِنۡ اَمۡرِ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُغَیِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتّٰی یُغَیِّرُوۡا مَا بِاَنۡفُسِہِمۡ ؕ وَاِذَاۤ اَرَادَ اللّٰہُ بِقَوۡمٍ سُوۡٓءًا فَلَا مَرَدَّ لَہٗ ۚ وَمَا لَہُمۡ مِّنۡ دُوۡنِہٖ مِنۡ وَّالٍ
অর্থ: প্রত্যেকের সামনে পিছনে এমন প্রহরী (ফেরেশতা) নিযুক্ত আছে, যারা আল্লাহর নির্দেশে পালাক্রমে তার হেফাজত করে। জেনে রেখ, আল্লাহ কোনও জাতির অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর কোন বিপদ আনার ইচ্ছা করেন, তখন তা রদ করা সম্ভব নয়। আর তিনি ছাড়া তাদের কোন রক্ষাকর্তা থাকতে পারে না।
এ আয়াতটির ব্যাখ্যায় তাফসিরে মাআরিফুল কোরআনে বলা হয়, মানুষের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ফেরেশতা নিয়োজিত আছে বলে কারও এই ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারত যে, আল্লাহ তাআলা যখন হেফাজতের এই ব্যবস্থা করে রেখেছেন, তখন আর এ নিয়ে মানুষের চিন্তা করার কোন দরকার নেই। সে নিশ্চিন্তে সব কাজ করতে পারে। এমনকি গুনাহ ও সওয়াবেরও বিচার করার প্রয়োজন নেই। কেননা ফেরেশতারাই সকল ক্ষেত্রে রক্ষা করবে। আয়াতের এ অংশে সেই ভুল ধারণা দূর করা হয়েছে।
বলা হয়েছে যে, এমনিতে আল্লাহ তাআলা কোন জাতির ভালো অবস্থাকে মন্দ অবস্থা দ্বারা বদলে দেন না। কিন্তু তারা নিজেরাই যখন নাফরমানি করতে বদ্ধপরিকর হয়ে যায় এবং নিজেদের আমল-আখলাক পরিবর্তন করে ফেলে তখন তাদের উপর আল্লাহ তাআলার আজাব এসে যায়। সে আজাব আর কেউ রদ করতে পারে না। সুতরাং যে সকল ফেরেশতা হেফাজতের কাজে নিয়োজিত আছে, এরূপ ক্ষেত্রে তারাও কোন কাজে আসে না। আয়াতে ‘প্রহরী’ দ্বারা ফেরেশতা বোঝানো হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির হেফাজতের জন্য কিছু ফেরেশতা নিযুক্ত করে দিয়েছেন। তারা পালাক্রমে এ দায়িত্ব পালন করে থাকে। কুরআন মাজিদে এর জন্য مُعَقِّبٰتٌ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ ‘পালাক্রমে আগমনকারী’। বুখারী শরীফের এক হাদিসে এর ব্যাখ্যা এ রকম এসেছে যে, ফেরেশতাদের একটি দলকে দিনের বেলা মানুষের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে এবং অপর একটি দল রাতের বেলা তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করে।
আবু দাউদের এক বর্ণনায় হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এসব ফেরেশতা বিভিন্ন রকমের বিপদাপদ থেকে মানুষকে হেফাজত করে। অবশ্য কাউকে যদি কোন মুসিবতে ফেলা আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে ফেরেশতাগণ তার থেকে দূরে সরে যায়।