সারা দেশ

আবারও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত শত কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা চারদিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় অর্ধলাখ পরিবার। ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক। ক্ষতি হয়ে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের। ভেসে গেছে লক্ষাধিক টাকার মাছ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মাছচাষিদের শত কোটি টাকার ক্ষতি হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা চারদিনের বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, সরকারতালুক, খিলমুরারী ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক।

উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ইছাখালী খালের ভাটি অঞ্চলে একটি বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান বাঁধ দেওয়ায় এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) এটির প্রতিকার চেয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজা জেরিনকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সরকারি নদী ও খাল দখল হওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে একটি চাইনিজ শিল্প প্রতিষ্ঠান (ওয়াং জিন হং) স্থানীয় ইছাখালী খালের ভাটি এলাকায় কৃত্রিম বাঁধ দেওয়ার ফলে এলাকার চুনিমিঝিরটেক, নতুন গ্রাম, হাফিজ গ্রাম, জমাদার গ্রাম ও সাহেবদী নগর গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে দিঘী খনন করে মৎস্য ঘের তৈরি করার কারণেও অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলার ফেনাপুনি, গাছবাড়িয়া, গোভনীয়া, বটতল, জোরারগঞ্জ ও করেরহাট ইউনিয়নেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

এছাড়াও গত চারদিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন পুকুর ও মৎস্য ঘের ডুবে লক্ষাধিক টাকার মাছ ভেসে গেছে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কগুলোতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের ফেনাপুনি এলাকার বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন শিবলু বলেন, গত ৪ দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আমাদের এলাকায় অনেক জায়গায় পানি উঠেছে। এতে করে এখানকার সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাস্তায় হাঁটুপানি উঠে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না।

বৃষ্টিতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপজেলার মাছচাষিরা। এখানকার বঙ্গোপসাগর উপকূলের সাত হাজারেরও বেশি মৎস্য ঘেরের পাড় উপচে একজনের প্রকল্পের মাছ চলে যাচ্ছে অন্যজনের প্রকল্পে। এছাড়া সাগর পার্শ্ববর্তী প্রকল্পের মাছ চলে যাচ্ছে সাগরে। এতে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে এখানকার মাছচাষিদের। ওয়াহেদপুর এলাকার কৃষক আলা উদ্দিন বলেন, এতো বেশি বৃষ্টি গত ৫ বছরেও দেখিনি।

আমি ৬ শতক জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করেছিলাম। পাহাড়ি ঢলে সব তলিয়ে গেছে। আবার নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে গেলে রোপণের সময় পার হয়ে যাবে। কী করবো বুঝতে পারছি না। চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষি মো. কামরুল হোসেন জানান, মুহুরী প্রকল্প এলাকায় প্রায় ৭ হাজার একর ঘেরে বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষ হয়। গত কয়েকদিন কয়েকশ একর ঘের পানিতে ডুবে গেছে।

নিচু এলাকাগুলোতে ঘেরের পাড় ভেঙে মাছ সাগরে ভেসে যাচ্ছে। কোনো কোনো চাষি নেট দিয়ে মাছ আটকানোর চেষ্টা করছেন। মূলত এতে লাভের লাভ কিছুই হবে না। স্থানীয় মৎস্যচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, শুক্রবার পর্যন্ত অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ মাছের ঘের ডুবে গেছে। এতে শত কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বে এখানকার চাষিরা।

মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, বৃষ্টি বন্ধ হলে চাষিরা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচবেন। আর যদি বৃষ্টি বন্ধ না হয় মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও আমরা সক্ষম হবো না। মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, চলতি মৌসুমে টানা বৃষ্টিতে কৃষকের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। প্রায় ১৭ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ১২ হেক্টর জমির সবজি। বৃষ্টি না কমলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।