সারা দেশ

পোশাক শ্রমিকদের দুশ্চিন্তা-হতাশা পিছু ছাড়ছে না

দেশের বৃহত্তর পোশাক শিল্প এলাকা রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুর। অসংখ্য শিল্প কারখানা ভরপুর থাকায়।গাজীপুরকে সারা দেশের মানুষ শিল্প নগরী হিসেবেই চিনেন। তবে শিল্প নগরী হিসেবে পরিচিত পেলেও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের হাজার-হাজার পোশাক শ্রমিকদের জীবনমানউন্নয়নে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।বিশেষ করে গত কয়েক বছরের মধ্যে দেশের বাজারে দ্রব্য মূল্যেরউর্ধগতির চাপে পড়ে এ শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা সংসারের ব্যয় বহনে হাঁপিয়ে উঠেছেন।এ শিল্পাঞ্চল শিল্প কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বিশেষ কোন ভাতা তো দুরের কথা তাদের মূল বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

এমন পরিস্থিতিতে এ শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনের নেতারা গত কয়েক বছর যাবত কারখানা মালিক,বিজিএমইএ ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শ্রমিকদের নতুন বেতন স্কেল করার জন্য।নতুন মজুরি ঘোষণা করার জন্য।শুধু গাজীপুর শিল্প এলাকা নয়। এ শিল্পাঞ্চলের পাশাপাশি দেশের অন্যসব শিল্প এলাকার পোশাক শ্রমিকরাও বিজিএমইএ এবং সরকারের প্রতি বার-বার বেতন বৃদ্ধির কথা বলতে থাকেন। একটা পর্যায়ে মালিক পক্ষ ও সরকার বেতন বৃদ্ধি আশ্বাস দিয়েছেন। আর সেই আশ্বাসের দিন হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস।

আসছে ডিসেম্বর মাসের বাকী মাত্র ২ মাস। এবার তাই দুশ্চিন্তা করছেন। সামনে বেতন বাড়বে কি বাড়বে না। কেননা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। অপরদিকে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ভাবে অস্থিরতা। এ অবস্থা চলতে থাকতে নতুন বেতন বাড়ার ব্যাপারে মালিক ও সরকার উভয় পল্টি মারতে পারে।এ অবস্থায় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বুঝা যাচ্ছে,দুশ্চিন্তা-হতাশা পিছু ছাড়ছে না পোশাক শ্রমিকদের।বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের দাম দিন-দিন হু-হু করে বেড়েই চলছে। এতে করে,পরিবারের সদস্যদের জন্য অন্য,বস্ত্র,খাদ্য,বাসস্থান,স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে খরচ বহন করতে কঠিন সময় পার করছেন সংসারের কর্তাব্যক্তিরা। দৃশ্যপট দেখে বুঝা যাচ্ছে এ অবস্থা থেকে শ্রমিকদের উদ্ধার করা অতি জরুরি।

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা তথ্যে উঠে এসেছে, গাজীপুর, আশুলিয়া,সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম শিল্প অঞ্চলের পোশাক শ্রমিকরা ওভার টাইম করে যেটুকু বাড়তি আয় করে তার সবটুকু উপার্জনই গ্রাস কর ফেলছে বাজারে নিত্য পণ্যের উচ্চ মূল্যের সিন্ডিকেটে।শুধু তাইই নয়,ইতিমধ্যে অর্থের অভাবে পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ খাবার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দিতে না পারায় পুষ্টি হীনতার শীকার হচ্ছে অনেকেই।ভোগ্যপণ্যের দাম প্রতিদিন বেড়েই চলছে। তবুও মজুরি বাড়ছে না। এর ফলে সীমাহীন কষ্ট এবংহতাশা বাড়ছে পোশাক শ্রমিকদের মাঝে। বিভিন্নতথ্য সূত্র বলছে, ওভারটাইম করে যেটুকু বাড়তি আয় হয়,তা-ও গিলে খাচ্ছে মূল্যস্ফীতি।পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম মজুরি ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন পোশাকশ্রমিকরা।

এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনে জুনে শ্রমিকদের দেওয়া আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি আজও। ফলে মূল্যস্ফীতির আগুনে পুড়ছেন পোশাক শ্রমিকরা।জাতিসংঘের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান সম্মিলিত মত প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে একজন মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য দৈনিক প্রয়োজন ২৭৬ টাকা। অর্থাৎ একজন শ্রমিকের শুধু খাদ্য বাবদ মাসিক ব্যয় ৮ হাজার ২৮০ টাকা। আর চার সদস্যের পরিবারের খাওয়ার খরচ বাবদ মাসে প্রয়োজন হবে ৩৩ হাজার ১২০ টাকা।

এমন পরিস্থিতিতে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণে নতুন মজুরি বোর্ড গঠন, ন্যূনতম মজুরি ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ, অন্তর্বর্তী সময়ে মহার্ঘ ভাতা, ভর্তুকি মূল্যে রেশন প্রদান শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারার অপপ্রয়োগ করে শ্রমিক নিপীড়ন বন্ধের দাবি করছে শ্রমিক সংগঠনগুলো।দেশের অন্যতম পোশাক শিল্প গ্রুপ পলমল যমুনা, মেট্রো, উর্মি গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ অব কারখানার শ্রমিকরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন,তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অভাব অনাটন তাদের সংসারে লেগেই থাকছে। কারখানা মালিক ও সরকার এটা বুঝতে ব্যর্থ হলে। পোশাক শ্রমিকরা রাজপথে সকল ভয় উপেক্ষা করে আন্দোলন শুরু করবেন।

পলপল গ্রুপে চাকরি করেন অপারেটর সুমন মিয়া জানান, তাদের বর্তমানে যে বেতন তা দিয়ে বাসাবাড়ি এবং ছেলে মেয়ের পড়া লেখা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরাসরি এবং মালিকপক্ষ যদি তাড়াতাড়ি বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা না করে। তাহলে শ্রমিকরা নিরুপায় হয়ে বেতন বৃদ্ধির জন্য রাস্তায় নামবে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শ্রমিক নেতা অভিযোগ করে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় মজুরি বৃদ্ধির কথা বললেই শ্রম আইনের ১৩(১) ধারার অপব্যবহার করে,কারখানার মালিকরা মিথ্য মামলা দিয়ে শ্রমিকদের ওপর দমন -নিপীড়ন চালাচ্ছে।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন,দেশের বর্তমান বাজার বিবেচনা করে পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠনে সরকার ও মালিকদের কাছে দাবি জানিয়েছি।তিনি আরও জানান, দেশের সার্বিক দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন মজুরিকাঠামো গঠন করা হলে পোশাক শিল্পে জড়িত শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। এছাড়া তিনি আরও বলেন, বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন মজুরি নির্ধারণ করা না হলে নতুন মজুরি কার্যত কোন সুফল বয়ে আনবে না।

শ্রমিকদের জীবন মান এবং বেতন ভাতা বৃদ্ধি বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে, বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে জানান, শ্রমিকদের কষ্টের কথা বিবেচনা করেই গেল ডিসেম্বর মাসে পোশাক শ্রমিকের যে বার বৎসরিক ইনক্রিমেন্ট হয়। সেটা বিগত বছরের তুলনায় বেশি পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও তিনি আরও জানান,চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি ঘোষণা করা হবে। এ জন্য তিনি শ্রমিকদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেন।