10 July 2024 , 6:13:22 প্রিন্ট সংস্করণ
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে মধুমতি নদীর সর্বগ্রাসী ভাঙেন গ্রাম ছেড়েছে শতশত পরিবার। এবারও বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে মধুমতি নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙনের তীব্রতা। এ নিয়ে নদী পাড়ের মানুষেরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত তাদের একটাই চিন্তা কখন যেন তাদের বসতভিটা মধুমতি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
এর পর পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন তা জানা নেই তাদের।স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত নদীতে বিলীন হয়েছে হাজার হাজার আবাদি জমি, ভিটেমাটি, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ সহায় সম্পদ। এমনকি বারবার ভাঙনে ওই এলাকার পাঁকা রাস্তাসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের খুঁটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সরেজমিনে তেলকাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ভাঙনের ভয়াবহতা এবং নদীপাড়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা।
গ্রামবাসীরা জানান, একাধিকবার মধুমতি নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন এখানকার মানুষ। বারবার প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন রোধের আশ্বাস দিলেও হয়নি কোনো প্রতিকার। বর্ষার শুরুতে এবারও ওই এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে কয়েকশত পরিবার। ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান গ্রামবাসী।উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া গ্রামের শরিফা বেগম বলেন, তাদের পূর্বপুরুষের ১০০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
এখন অন্যের জমি বর্গাচাষ করে পরিবারের সকলের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। এ পর্যন্ত ৩ বার ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবার। এবারও ভাঙনের দাঁরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। কী করবেন ভেবেই পাচ্ছেন না। তিনি এ ভাঙনরোধে নড়াইল -২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা এমপির সহযোগিতা কামনা করেন।তেলকাড়া গ্রামের হাসমত শিকদার বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে শত শত পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। অনেক আপনজন গ্রাম ছেড়ে কোথায় যে চলে গেছে তাদের জানা নেই।
তাদের সাথে কখনও আর দেখা হবে কিনা তাও তিনি জানেন না।ভাঙন কবলিত তেলকাড়া গ্রামের রুব্বান বেগম, রহিমা বেগম, হেমায়েত মোল্যা, ও সাবেক ইউপি সদস্য মাহাবুর রহমান বলেন, মধুমতি নদী ভাঙনে নদীতে তাদের বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে। তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটামাটি এখন নদীর ওপার গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে চলে গেছে। তাদের এসব জমি গুলো জবরদখল করে রেখেছে ওই এলাকার মানুষ। নদী ভাঙনে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছেন ওই সমস্ত পরিবার। আবারও ভাঙতে ভাঙতে নদীর কিনারে চলে এসেছে তাদের বসতভিটা।
যেভাবে নদী ভাঙতে শুরু করেছে তাতে করে বসতভিটা কখন যে নদীতে বিলীন হয়ে যায় এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। এবার বসতবাড়ি ভাঙলে আর মাথা গেজার ঠাঁই থাকবে না তাদের। এখন তাদের একটাই আকুতি সরকারের পক্ষ থেকে যেন ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।স্থানীয় ইউপি সদস্য নান্টু শিকদার বলেন, মধুমতি নদী ভাঙনে অসংখ্য বসতবাড়ি, আবাদি জমি, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ভাঙনের শিকার হয়েছে। তিনি জানান কয়েক বছর আগে এই ওয়ার্ডে এক হাজার ভোটার ছিল সেটি কমে এখন এক হাজার ভোটার আছে।
ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়া হয় কয়েক বছরের মধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে পুরো গ্রাম-জনপদ।এ ব্যাপারে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শফি উল্লাহ বলেন, নড়াইল সীমানায় মধুমতি নদী ভাঙন কবলিত যে পয়েন্টগুলো রয়েছে সবগুলো পয়েন্টের ভাঙন রোধে জাতীয় সংসদের হুইপ ও নড়াইল- ২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা নিরলস ভাবে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে ভাঙন রোধে ওইসব এলাকায় কাজ করা হবে।