11 June 2024 , 4:25:16 প্রিন্ট সংস্করণ
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নির্মিত হচ্ছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে রিজিওনাল ট্রেনিং সেন্টারের কয়েকটি ভবন। প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ের এই নির্মাণ প্রকল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে নিুমানের ইট, বালু, সিমেন্ট। এমনকি সিমেন্টের ব্যবহার নেই বললে চলে। টাকা বাঁচাতে দক্ষ কোনো রাজমিস্ত্রি না রেখে অর্ধশতাধিক শিশুকে দিয়ে চলছে পুরো ভবন নির্মাণের কাজ।অভিযোগ আছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে.জে.টি-আইবি-এআরএম (জভি)-এর স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম ও প্রকল্প দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রকৌশলী মো. মোরশেদুল আলমের যোগসাজশে নজিরবিহীন অনিয়ম হচ্ছে এই ভবন নির্মাণে।
এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে প্রতিবেদকের চাকরি খাওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।সরেজমিন দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের রাস্তামাথা এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক লাগোয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে চকরিয়া রিজিওনাল ট্রেনিং সেন্টারটি। এই ট্রেনিং সেন্টারে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণ হয়ে গেছে। এসব ভবনের নিচে এখনো ফাঁকা রয়েছে। নিচে পর্যাপ্ত বালু না দেওয়ায় যে কোনো সময় ভবন হেলে যেতে পারে। ওই ট্রেনিং সেন্টার বর্তমানে পাঁচতলা ভবনের নির্মাণ চলছে। সামনে নির্মাণসামগ্রী মজুত করে রাখা হয়েছে। যেখানে দেখা যায় বিপুল পরিমাণ বাংলা রড ও নিুমানের ইট, স্থানীয় বালু, সিমেন্ট মজুত করে রাখা হয়েছে।
শ্রমিকরা সেখান থেকে বালু আর সিমেন্ট নিয়ে পলেস্তরার কাজ করছে। ট্রেনিং সেন্টারের নিচতলা বালু দিয়ে ভরাট করার কথা থাকলেও পার্শ্ববর্তী ফাইতং ইউনিয়ন থেকে পাহাড়ের মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এছাড়া ভবন নির্মাণে শিডিউলে দেওয়া আছে ভালো ব্র্যান্ডের কোম্পানির রড কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে খুবই নিম্নমানের বাংলা রড। এছাড়া সিলেটের বালু না দিয়ে স্থানীয় বালু ব্যবহার করে সেরে দিচ্ছেন ভবন নির্মাণকাজ। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে নির্মাণ হওয়া ট্রনিং সেন্টারের কাজের দেখভাল করতে একজন প্রকৌশলী দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কাজের তদারকি না করে ঠিকাদারের কাজ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।এ ভবনের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ১২-১৪ বছর বয়সের বেশ কয়েকজন ছেলে কাজ করছে।
তাদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। সেখানে কথা হয় রিফাত নামের এক শিশুর সাথে। সে যুগান্তরকে বলে, ৪১০ টাকা মজুরিতে এখানে কাজ করতে এসেছি প্রায় দুই মাস হয়ে গেছে। সামনে ঈদের আগে আবার বাড়িতে যাব। এই ভবনে অন্তত ৪০-৫০ জন শিশু কাজ করছে বলেও সে জানায়। নিুমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করায় ক্ষুব্ধ ওই এলাকার বাসিন্দারা। বরাদ্দের কাগজ ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ প্রকল্পের কাজ পেয়েছেন জে.জে.টি-আইবি-এআরএম (জভি) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম (কাজলী কাশেম)। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি চলতি বছরের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শিডিউল অনুযায়ী কাজ না করে তার পরিবর্তে মাটিবালু, নিম্নমানের ইট ও রড দিয়ে কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। কাজের মান ঠিক রেখে কাজ করার জন্য এলাকাবাসী বারবার অনুরোধ করেও কোনো সাড়া পাননি। বরং রাতের বেলায় ছোট ছোট শিশুদের দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ চলমান রেখেছে ঠিকাদার। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে.জে.টি-আইবি- এআরএম (জভি)-এর স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম (কাজলী কাশেম) যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি আপনার ভালোর জন্য বলছি, আপনি এ নিউজ করলে বিপদে পড়ে যাবেন। আপনার চাকরি চলে যাবে।’ অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রকৌশলী মো. মোরশেদুল আলম প্রথমে সেখানে তদারকি করার অধিকার নেই বললেও পরে সে বক্তব্য থেকে সরে আসেন।
তিনি বলেন, ভবন নির্মাণে নানা কাজে অনিয়ম হচ্ছে সেটা আমার জ্ঞানের মধ্যে নেই। আমি কয়েকবার সেখানে গিয়েছি তখন অনিয়ম চোখে পড়েনি। যোগসাজশে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।কক্সবাজার জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুযোগ পেলে অনেকে অনিয়ম করতে চায়। অনিয়মের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেব।