শিক্ষা

পা ধুইয়ে শিক্ষককে বিদায় অঝোরে কাঁদল শিক্ষার্থীরা

পা ধুইয়ে শিক্ষককে বিদায় অঝোরে কাঁদল শিক্ষার্থীরা

অবসরে যাওয়া স্কুলের এক প্রধান শিক্ষককে পা ধুইয়ে বিদায় দেওয়ার বেলায় অঝোরে কাঁদলেন বিদায়ী শিক্ষকসহ কোমলমতি শিশু ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। এতে আবেগঘন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেও রঙিন বেলুন আর ফুলে সজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে বিদায়ী শিক্ষককে পৌঁছে দেওয়া হয় তার বাড়িতে।

সোমবার (৪ঠা ফেব্রুয়ারি) যশোর সদরের পূর্বআবাদ কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এ বর্নিল শিক্ষকের বিদায় আয়োজন করে।সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বআবাদ কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনূর রহমানকে বিদায় সংবর্ধনা জানাতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তার পা ধুইয়ে গামছা দিয়ে মুছে দেন।

এরপর কোলে করে রঙিন বেলুন আর ফুলে সজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে উঠান। তারপর শোভাযাত্রা সহকারে পৌঁছে দেয় বাড়িতে। এসময় প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষার্থীরা।বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন শাহিনূর রহমান। ২০১৩ সালে স্কুল সরকারিকরণের আগে তিনি বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেছেন।

একবার উপজেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘ শিক্ষা জীবনে শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতো স্নেহ মমতায় বড় করে তুলেছেন। বিদায় বেলায় তার স্বীকৃতিও পেলেন। শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ফিরলেন অবসর জীবনে।শিক্ষার্থীদের দাবি প্রিয় শিক্ষকের বিদায়ক্ষণটি স্মরণীয় করে রাখতেই ফুলেল শুভেচ্ছা, বিভিন্ন উপহারসামগ্রী এবং সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি চড়িয়ে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয় বাড়িতে।

জামান সরদার নামে এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা শাহিনুর স্যারের কাছ থেকে যে শাসন পেয়েছি সেটাই আজ আমাদের আলোকিত করেছে। স্যারের শাসনের মধ্যে অন্যরকম একটা স্নেহ মমতা ছিল।শিক্ষার্থীরা বলেন, স্যার আমাদের নিজের ছেলে-মেয়ের চোখে দেখেছেন। কখনো আমাদের মনে হয়নি স্যার আমাদের দূরের কেউ। স্যারের পাঠদানের স্মৃতি ভোলার নয়।

গ্রামের অনেক মানুষকে তিনি শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেছেন। তার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেকেই আজ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।এমন সংবর্ধনা পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন অবসরে যাওয়া শিক্ষক শাহিনূর রহমান। বলেন, আমার তিন দশক শিক্ষকতা জীবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।

শেষ দিনে আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, এটি আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া। আমি আর কখনো এ বিদ্যালয়ে আসবো না।শেষ এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন যশোর সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।তিনি বলেন, একজন সৃজনশীল শিক্ষকের এমন সংবর্ধনায় আমি অংশ নিতে পেরে খুব খুশি। এ আয়োজন অন্য শিক্ষকদের একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে গড়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করবে।

আরও খবর

Sponsered content