সারা দেশ

মিয়ানমারে ত্রিমুখী সংঘর্ষ আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছেন স্থানীয়রা

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির ত্রিমুখী ভয়াবহ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্ত। রাখাইনে শনিবার রাত থেকে এখনো পর্যন্ত (সোমবার দুপুর ১২টা) সংঘর্ষ চলছে। এই মুহূর্তে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বেতবুনিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরের রাইট ক্যাম্প লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়ছে জান্তা সেনারা।

এর আগে রবিবার রাতে উখিয়ার ঢেকুবনিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ভোরে গোলাগুলি একটু কমলেও সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এই পয়েন্টও শুরু হয়েছে বিমান থেকে গুলিবর্ষণ।এদিকে মিয়ানমারের সংঘর্ষে দিশেহারা হয়ে ঘরবাড়ি ছাড়তে শুরু করেছে সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকরা। এছাড়া এ পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে বাংলাদেশি ৪ জন বাসিন্দা আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলা হয়নি।

এলাকাবাসীরা জানান, তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষ চলাকালে আহত ৪ জনই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা।আহতরা হলেন, বাজারের দক্ষিণ পাশে হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা প্রবীন্দ্র ধর (৫০), শামসুল আলম টিটু (৩৫), ঘুমধুম ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ সিদ্দিকীর স্ত্রী রহিমা খাতুন (৫০) ও উলুবনিয়া এলাকার শামসু ফকির (৫০)।সংঘর্ষের প্রভাবে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের আশেপাশের এলাকা তুমব্রুর কোনারপাড়া, মধ্যমপাড়া, উত্তর পাড়া ও পশ্চিমপাড়াসহ অন্তত ৪-৫টি গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কে ঘর ছেড়ে অন্যত্রে চলে গেছেন।

রোববার সকাল থেকেই সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা তাদের ঘর ছেড়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে দুপুরে কয়েক দফা হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি বর্ষণ করা হয়। এ সময় চারদিকে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, রাতে আমার ইউপির মানুষজন গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কগ্রস্ত ছিল। ভোরের দিকে সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী অনেকেই নিরাপদ স্থানে সরে গেছে। তিনি আরও বলেন, সোমবার সকালের দিকে গোলাগুলি কিছুটা বন্ধ থাকলেও এখন আবার হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়েছে।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, রবিবারের সংঘর্ষ তুমব্রুতে চলেছিল, সোমবার চলছে বেতবুনিয়ার রাইট ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায়। এদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। সীমান্তের কাছাকাছি যারা বসবাস করেন তারা নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে। আমার ইউনিয়নের ৫টি স্কুল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মাশরুকি জানান, সীমান্তে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। এছাড়া মানবিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনা মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের নিরস্ত্র করে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, এটা সত্য মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তবুও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যদের নিরস্ত্র করে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, সীমান্ত সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আমাদের রক্ষীরা। সীমান্ত বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে।

%d bloggers like this: