সারা দেশ

এলাকাবাসীর ঘুম হারাম ঢিলের আতঙ্কে

রাতের আঁধার নামলেই বাসার ছাদে শিলাবৃষ্টির মতো পড়ছে ঢিল। বাইরে বেরিয়ে কারও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। বাসায় ঢুকলে আবারও শুরু হয় ঢিল পড়া। সকালে প্রতি বাসার ছাদে মিলছে ৮-১০টি ঢিল। রহস্যও অজানা। অদৃশ্য আতঙ্কে রাতের ঘুম হারাম হয়েছে এলাকাবাসীর। এমন ঘটনা ঘটছে রাজশাহী নগরীর শিরোইল কলোনি এলাকায়। ওই এলাকার ৩ নম্বর রোডের বাসিন্দাদের মাঝে এক সপ্তাহ থেকে ‘ঢিল আতঙ্ক’ বিরাজ করছে।

ঢিলগুলো কোথা থেকে আসছে, তা জানার চেষ্টা করেও কোনো কুলকিনারা করতে পাচ্ছেন না তারা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাত ৯টা থেকে বাসার ছাদ ও টিনের চালের ওপর ঢিল পড়া শুরু হয়। ভোর সাড়ে ৩টার দিকে ঢিল পড়ার মাত্রা কমে আসে। ফলে এলাকার অলিগলিতে টর্চলাইট নিয়ে পাহাড়া দিচ্ছেন স্থানীয় যুবকরা। এমনকি রাতের বেলা দালান বাড়ির ছাদে উঠে বসে থাকছেন কেউ কেউ। তবুও এ রহস্য উন্মোচন করতে না পারায় আতঙ্কে রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের।

বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ফারিক আহমেদ বলে, রাত হলেই আমাদের বাড়ির ছাদে ঢিল পড়ে। আমার খুব ভয় হয়। সামনে ২৩ নভেম্বর থেকে আমার পরীক্ষা। ঢিলের কারণে লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। দুই বছরের শিশু মাহির তাজওয়ার রাফিও মুখ ফুটে বলে, ঢিল পড়লে আমার ভয় হয়।সেরাজুল ইসলাম নামে ভুক্তভোগী স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বাসার ছাদে উঠে প্রতিদিন ৮-১০ টা করে ঢিল নামিয়ে জড়ো করে রাখা এখন একটা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কে বা কারা এমনটা করছে বুঝতেও পারছি না। ক্রমাগত ঢিল পড়া বন্ধ না হলে, অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিরা তো হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে।শিরোইল কলোনির ৩ নম্বর গলির বাসিন্দা ডলার, আরমান, শামিম, রেশমা, কারিনা ও মুন্নিসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, এলাকার বখাটেরা এমনটা করতে পারে। তারা মজা করতে গিয়ে আমাদের ঘুম হারাম করে রেখেছে। কত মানুষের বুকের ব্যাথাকে জাগিয়ে দিচ্ছে, তার খবর কেউ রাখে না। রাতভর বিষয়টি নিয়ে ভাবনা কাউকে কাউকে প্রতিবাদী করে তুলছে।

কিন্তু দিনের ব্যস্ততায় সে প্রতিবাদ হারিয়ে যায়। কারা এ জঘন্য কাজের সাথে জড়িত, তা খুঁজে না পাওয়ায় রহস্যের জন্ম দিয়েছে অনেকের মনে।এমন ঘটনায় তাহলে কী অলৌকিক বা অন্য কোনো বিষয় জড়িত থাকতে পারে- এমন প্রশ্নে কামরুল ইসলাম ও ওয়াকিল আহমেদ নামে স্থানীয় দুই ব্যক্তি বলেন, সেটাও হতে পারে। প্রায় ৩০ বছর আগে এখানে একবার এমন ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়া একে অপরকে দোষারোপ করার কারণে ব্যাপক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল।

তারা বলেন, আগেরবার ছাদের ওপর ঢিলের শব্দ পেলেও ছাদে গিয়ে কোন ঢিল খুঁজে পাওয়া যেত না। তবে এক সময় ঢিল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এবার তো ঢিল থাকছে। কিন্তু কারা মারছে তা বুঝতে পারছি না, রাতে পাহারা দিয়ে ধরাও যাচ্ছে না। এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন বলেন, ঘটনাটি আমি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।

টিনের ছাদে ঢিল মারার ঘটনা বরদাশত করা হবে না। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে। এ ব্যাপারে আরএমপির চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, এলাকায় শান্তি বিনষ্টকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে পুলিশ মাঠে কাজ শুরু করেছে।