19 June 2025 , 11:10:38 প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নন-নিউক্লিয়ার বোমার নাম জেবিইউ-৫এ/বি ম্যাসিভ অরড্যান্স পেনিট্রেটর (Massive Ordnance Penetrator বা MOP)। প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড বা ১৩ হাজার ৬০০ কেজি ওজনের এই বোমাটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি বা ‘বাংকার’ ধ্বংসের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা এই বোমাটি পারমাণবিক না হলেও এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ভয়াবহ।
এমওপি বোমাটি মাটির প্রায় ২০০ ফুট (৬১ মিটার) গভীরে প্রবেশ করে তারপর বিস্ফোরিত হয়। কোনো শক্তিশালী সুরক্ষিত বাংকার বা ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাও এর আঘাত থেকে রক্ষা পায় না। এই প্রযুক্তি মূলত ব্যবহৃত হতে পারে এমনসব লক্ষ্যবস্তুতে, যা সাধারণ বিমান হামলায় ধ্বংস করা সম্ভব নয়।
এই বিশাল বোমা কেবলমাত্র বি-২ স্পিরিট স্টিলথ বোম্বারে বহনযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের এই সুপার আধুনিক বোমারু বিমান রাডারে প্রায় ধরা পড়ে না, এবং তা একসঙ্গে দুটি এমওপি বহন করে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে পারে। মাঝপথে আকাশেই জ্বালানি ভরার সুযোগ থাকায় এর অভিযানের পরিসর আরও বাড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা, বিশেষ করে ফারদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, ধ্বংসে এমওপি হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। এই স্থাপনাটি পাহাড়ের নিচে, মাটি থেকে প্রায় ৮০-৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত। এমওপি-এর সক্ষমতা সেই গভীরতাকে টার্গেট করতে সক্ষম বলে ধারণা করা হয়।
এত শক্তিশালী অস্ত্র থাকলেও এমওপি এখনো কোনো যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের ইরানবিরোধী আগ্রাসন পরিকল্পনায় এই বোমার সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। তবে এখনো ইসরায়েলের হাতে এই বোমা নেই, এবং যুক্তরাষ্ট্রও এখনো তাদের ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। ফলে এই অস্ত্র ব্যবহার আদৌ হবে কি না, তা নির্ভর করছে ওয়াশিংটন কতটা সরাসরি তেহরানবিরোধী অভিযানে জড়াবে, তার ওপর।
বিশ্ব যখন আরও জটিল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন এমওপি-এর মতো অস্ত্র শুধু শক্তির প্রতীক নয়, বরং একটি বড় কৌশলগত বার্তাও। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এর ব্যবহার কতটা গ্রহণযোগ্য হবে এবং কবে তা বাস্তবায়িত হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।