আন্তর্জাতিক

অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করতে বাইডেনকে চিঠি মার্কিন সিনেটরদের

অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করতে বাইডেনকে চিঠি মার্কিন সিনেটরদের

ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল সিনেটর। এ লক্ষ্যে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। এমনকি গাজায় মানবিক কার্যক্রমে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার হস্তক্ষেপ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। বুধবার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আটজন সিনেটর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি পাঠিয়ে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাধীন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এবং সাতজন ডেমোক্র্যাট সিনেটর গত সোমবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ওই চিঠিটি পাঠান।চিঠিতে তারা বলেছেন, মানবিক কার্যক্রমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের হস্তক্ষেপ মার্কিন সাহায্য নিরাপদ এবং সময়মত দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছাতে বাধা দিয়েছে।

সিনেটররা জোর দিয়ে বলেছেন, মার্কিন মানবিক কার্যক্রমে নেতানিয়াহু সরকারের হস্তক্ষেপ মানবিক সহায়তা করিডোর আইনের লঙ্ঘন।চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এই অধ্যায় বা অস্ত্র রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে কোনও দেশকে কোনও সহায়তা প্রদান করা যাবে না যখন প্রেসিডেন্টের কাছে জানানো হয়, কোনও দেশের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা পরিবহন বা বিতরণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিষিদ্ধ বা অন্য কোনওভাবে বিধি-নিষেধ আরোপ করে।’

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘এই বাস্তবতার আলোকে আমরা আপনাকে নেতানিয়াহু সরকারের কাছে এটিই স্পষ্ট করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি, অবিলম্বে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে মানবিক সহায়তার প্রবেশ প্রসারিত করতে এবং গাজাজুড়ে নিরাপদভাবে সাহায্য বিতরণে ব্যর্থতা গুরুতর পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে, যা বিদ্যমান মার্কিন আইনের অধীনে উল্লেখ করা হয়েছে।সিনেটররা উল্লেখ করেছেন, গাজা উপত্যকায় উদ্ভূত গুরুতর মানবিক বিপর্যয় আধুনিক ইতিহাসে ‘প্রায় অনুপস্থিত’।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন।

যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭২ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ।ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনও ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক অন্তর্বর্তী রায়ে এই আদালত তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়।