জাতীয়

কুষ্টিয়ায় প্রচার প্রচারনা ছাড়াই অর্থনৈতিক শুমারী শুরু

প্রচার নেই, প্রচারনা নেই। এক প্রকার নীরব আর গোপনেই গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়া জেলায় শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক শুমারী ২০২৪। ভরসা পুরানো গননাকারীরাই। অনেকেরই ধারনা, পুরানো গননাকারীরা ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত এবং আওয়ামী ঘরনার। তাদের হাতে দেশের জন্য অত্যান্ত জনগুরুত্বর্পূন অর্থনৈতিক শুমারীর সঠিক হিসাব আসবে তো ? সারা দেশে এক যোগে গতকাল ১০ ডিসেম্বর থেকে অর্থনৈতিক শুমারি শুরু হয়েছে। ১৫ দিনব্যাপী এই শুমারি চলবে থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ‘অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪’-এর মূল তথ্য সংগ্রহ করবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে প্রতি ১০ বছর পর শুমারি করে থাকে সংস্থাটি। কুষ্টিয়া জেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া জেলায় ২০২৪ এর অর্থনৈতিক শুমারী সম্পাদন করতে ১ হাজার ৩’শ ৪৪ জন গননাকারী নির্ধারন করা হয়েছে। তাদের দেক ভাল করবেন ২’শ ৪৯ সুপারভাইজার। ১০ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই সব গননাকারী পৌঁছাবেন জেলার ২ লক্ষ ১ হাজার ৬’শ অর্থনৈতিক কারবারীদের কাছে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় গননাকারী রয়েছে ৩’শ ৩২ জন। সুপারভাইজার ৬২ জন। ভেড়ামারা উপজেলায় ১’শ ৪১ জন। সুপারভাইজার ২৫। মিরপুর উপজেলায় ২’শ ৩৩ জন। সুপারভাইজার ৪৩। দৌলতপুর উপজেলায় ২’শ ৮২ জন। সুপারভাইজার ৫১ খোকসা উপজেলায় ৯৪ জন। সুপারভাইজার ১৭। কুমারখালী উপজেলায় ২’শ ৬২ জন এবং সুপারভাইজার ৫১ জন। ১ হাজার ৫’শ ৯৩ জন গননাকারী ও সুপারভাইজার কে নিয়ন্ত্রন করতে রয়েছে ৪১ জন জোনাল এবং ৬ জন উপজেলা সম্বন্বয়কারী এবং ১ জন জেলা সম্বন্বয়কারী। অভিযোগ উঠেছে, কোন প্রকার প্রচার প্রচারনা না করেই অর্থনৈতিক শুমারী শুরু হচ্ছে। এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে নিয়োগ পাওয়া পুরানো তথ্য সংগ্রহকারী বা গননাকারী দিয়েই অর্থনৈতিক শুমারীর কাজ করা হবে। প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী ঘরনার ওই সব গননাকারীদের দিয়ে কতটুকু সঠিক অর্থনৈতিক তথ্য উঠে আসবে? তথ্য সংগ্রহকারীদের নিয়োগ নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলেছে বিশ্লেষকরা।

ভেড়ামারা থানা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শাহিন আল মামুন জানান, বাংলাদেশ সরকারের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন এই অর্থনৈতিক শুমারী। প্রতি ১০ বছর পর পর এই শুমারী করা হয়ে থাকে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস থেকেই মুলত অর্থনৈতিক শুমারীর কাজ শুরু হয়েছে। এ সময় জোনাল অপারেশন কার্যক্রম চালানো হয়। পরে জুলাই মাস থেকে লিষ্টিং কার্যক্রম করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে আবারো সেকেন্ড জোনাল অপারেশন কার্যক্রম চালানো হয়। এসময় মুলত গড়ে ১৫০টি খানা বা পরিবার নিয়ে এরিয়া ভাগ করা হয়। ভেড়ামারা উপজেলায় ১৪১ টি এরিয়া রয়েছে। প্রত্যেক এরিয়ায় ১ জন করে গননাকারী তথ্য সংগ্রহ করবে ট্যাব’র মাধ্যমে। এদের তদারকি করার জন্য ২৫ জন সুপারভাইজার কাজ করবেন। তিনি জানান, এবছর অর্থনৈতিক শুমারীতে ৭৫ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রচার প্রচারনা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, প্রচার প্রচারনা করার কোন নির্দেশনা নেই। তবে আগামীকাল গননা শুরুর দিনই ৪টি মাইক বের হবে ভেড়ামারার ৪টি জোনাল এরিয়ায়।

উপজেলা শুমারী কমিটিতে ২৬ জন এবং পৌর কমিটির ১১ জন সদস্য নিয়ে পৃথক পৃথক ২টি শুমারী কমিটি হলেও ভেড়ামারা উপজেলার কোন কমিটিতেই মিডিয়ার কোন কর্মী কে রাখা হয়নি উল্লেখ্য করে তিনি জানান, সব কমিটিতে মিডিয়া কর্মীদের রাখার বিধান রয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা পরিসংখ্যান বিভাগের উপ-পরিচালক শাহ্ আলম’র সাথে মোবাইলে কথা হয়। তিনি জানান, ১৫ দিনব্যাপী অর্থনৈতিক শুমারী সফল করার লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সর্ম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে খানা তথ্য ভান্ডার শুমারী, ২০১৯ সালে কৃষি শুমারী, ২০২২ সালে জন শুমারী আমরা সফল ভাবে সম্পাদন করেছি। সেই সকল তথ্য সংগ্রহকারী বা গননাকারীদের দিয়েই এবারো অর্থনৈতিক শুমারী সফল করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, জনশুমারীতে ১০৫১ জন তথ্য সংগ্রহকারী ছিল। অর্থনৈতিক শুমারী তে ১৩৪৪ জন তথ্য সংগ্রহকারী রয়েছে। নতুন যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সুপারিশ এবং যাচাই বাছাই এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।