বিনোদন

আবারও বাংলাদেশের ব্যান্ডের মাল বিশ্বজুড়ে চাহিদা বাড়ছে

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাস স্বাধীনতার সময়কাল থেকেই সমৃদ্ধ। কালে-কালে দেশের ব্যান্ড সংগীতে রাজত্ব করেছেন অসংখ্য কিংবদন্তি। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ওমর খালেদ রুমী, সাজিদ উল আলম ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহিদ, হ্যাপি আখন্দ, আজম খানসহ অসংখ্য নাম। এরপর নগর বাউল, মাইলস, এলআরবি, রেনেসাঁ, আর্ক থেকে শুরু করে সময়ের ওয়ারফেজ, অর্থহীন, আর্টসেল, শিরোনামহীন, চিরকুট, ব্ল্যাকসহ অসংখ্য জনপ্রিয় ব্যান্ড এসেছে, যারা যুগের পর যুগ ধরে দেশের এই ইন্ডাস্ট্রিকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছে।

তাইতো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে চাহিদা বেড়েছে বাংলাদেশি ব্যান্ডের। বলতে গেলে বাংলাদেশের ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ধারে কাছে উপমহাদেশের কোনো ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিই এখন নেই।ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় কিছু ব্যান্ড থাকলেও এসব দেশেও বাংলাদেশি ব্যান্ড সংগীতের শ্রোতা রয়েছে। তাইতো দেশি ব্যান্ডগুলো ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত কনসার্ট করার আমন্ত্রণ পেয়ে যাচ্ছে।দেশের ব্যান্ডগুলোর বিশ্বব্যাপী এমন জনপ্রিয়তা নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন ওয়ারফেজ ব্যান্ডের শেখ মনিরুল আলম টিপু, শিরোনামহীন ব্যান্ডের দলপ্রধান জিয়াউর রহমান জিয়া ও চিরকুট ব্যান্ড প্রধান শারমিন সুলতানা সুমি।

শুরুতেই টিপু বলেন, ‘দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলো বিশ্বব্যাপী এখন প্রচুর শো করছে, যা অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো খবর। এখন প্রতি বছরই আমাদের দেশের বাইরে কনসার্ট আছে। দেশেও প্রচুর শো হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যারা ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চাইবে তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো সম্ভাবনার সুযোগ করে দেবে বলে আমি আশাবাদী। কারণ বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের ভক্ত বিশ্বজুড়ে। এ কারণে শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও আমাদের জন্য সুযোগ রয়েছে। এভাবে প্রবাসীদের ভালোবাসা পেতে থাকলে আমাদের ব্যান্ড অনেক দূরে যাবে একদিন।এদিকে নিজেদের ৪০ বছর উদযাপনে আমেরিকা যাচ্ছে ব্যান্ড ওয়ারফেজ।দেশের জনপ্রিয় রক ব্যান্ড শিরোনামহীন এরই মধ্যে ইউরোপসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশে কনসার্ট করেছে। এ বছর তারা প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ায় কনসার্ট করবে।

দেশের বাইরে কনসার্ট নিয়ে জিয়া বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে দেশে বেশকিছু কনসার্ট করেছি। ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা দীর্ঘসময় ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ভক্তদের নতুন নতুন গান উপহার দিচ্ছি। তবে দেশের বাইরে আমাদের চাহিদা বেড়েছে ২০১৭ সালের পর থেকে। এরপর থেকে আমাদের প্রতি বছরই ইউরোপ ট্যুর থাকে। এটি আমাদের গান করে বেঁচে থাকার জন্য দিন দিন আরও উৎসাহী করছে। এ মাসে আমরা প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। এরপর আমাদের কানাডা ট্যুর রয়েছে। দেশেও অনেক ব্যস্ততা যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে ব্যান্ড দুর্দান্ত একটি সময় পার করছে। নতুন ব্যান্ডগুলোর চাহিদাও দেশের শ্রোতাদের কাছে বেড়েছে। একটা সময় তাদেরও বাইরের দেশ থেকে কনসার্ট করতে ডাকা হবে। তাই আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো সংবাদ।

বর্তমানে কনসার্ট করতে নর্থ আমেরিকার দেশ কানাডায় আছে ব্যান্ড চিরকুট। সেখান থেকে ব্যান্ডপ্রধান সুমি বলেন, ‘চিরকুট বাংলাদেশের গান বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে। দেশ ও দেশের বাইরে আমাদের গানের অসংখ্য শ্রোতা রয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিদেশিরাও আমাদের কনসার্টে আসছে, গান শুনছে, তাদের ভালোলাগার কথা প্রকাশ করছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের। শুধু ব্যান্ডের গান নয়, আমাদের মিউজিশিয়ানদের নিয়েও বাইরের দেশে খুবই আলোচনা হয়। এটাও খুবই ভালো দিক।

কারণ দেশে কিছু মিউজিশিয়ান রয়েছে, যারা বিশ্বের যে কোনো মিউজিশিয়ানের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে। সম্প্রতি কানাডায় দীর্ঘ ট্যুর করে দেশে ফিরেছে ব্যান্ড আর্টসেল। এ ছাড়া ফ্রান্স ট্যুর শেষে দেশে ফিরেছে ব্যান্ড অ্যাশেজ, এ বছরই রাফা ও তাহসান তাদের ব্যান্ড নিয়ে অস্ট্রেলিয়া মাতিয়েছেন। বর্তমানে কানাডায় কনসার্ট করছে নগর বাউল জেমস। মাসব্যাপী দেশটির বিভিন্ন শহরে পারফর্ম করবে তারা। ব্যান্ড নেমেসিসও বর্তমানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। তবে এসব কনসার্টের বেশিরভাগই আয়োজন করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সংস্থা, যেখানে দেশি শ্রোতাদের পাশাপাশি বিদেশি শ্রোতাদেরও উপস্থিত হতে দেখা যায়। তাইতো বিদেশে দেশি ব্যান্ডের এমন জনপ্রিয়তা প্রবাসীদের জন্যেও গর্বের কারণ হচ্ছে দিন দিন।