13 May 2024 , 6:49:45 প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া রোগীদের ছাড়পত্রের সঙ্গে দেওয়া হয় ফুলের তোড়া। ফুলেল শুভেচ্ছার মাধ্যমে সদ্য সুস্থ হওয়া রোগীদের বাড়ি পাঠানো হয়। এতে সুস্থতার সুখের পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিও পায় ওই হাসপাতালে সেবা নেওয়া রোগীরা। রোগীদের সরকারি হাসপাতালমুখী করতেই এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ ভিন্নধর্মী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোরে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়ে সদ্য সুস্থ হওয়া রোগী ও রোগীর স্বজনরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব রোগীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ছাড়পত্র ও ফুলের তোড়া। ছাড়পত্র আর ফুলেল শুভেচ্ছা নিয়ে হাসিমুখে রোগীরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের সুস্থতায় চিকিৎসক ও সেবিকারাও খুশি।
আবার কোনো কোনো রোগী যাওয়ার সময় চিকিৎসক ও সেবিকাদের দোয়াও করে যাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রোগীদের প্রতি এমন ভালোবাসা এ যেন এক মানবিকতার মন ভোলানো দৃশ্য।জানা গেছে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিনের উদ্যোগে রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার সপ্তাহে তিন দিন মেলে এই অতিরিক্ত সেবা। রোগীদের সরকারি হাসপাতালমুখী করতেই বাড়তি এই সেবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও সেবিকাদের একাগ্র সেবার মানোন্নয়নের ফলে সরকারি হাসপাতালমুখী রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।
সেবা নেওয়া ১৪ মাস বয়সী রোগী আলিফার মা সুমাইয়া জান্নাত জানান, পাতলা পায়খানাজনিত সমস্যা নিয়ে আলিফাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসক ও সেবিকাদের আন্তরিক চিকিৎসা ও পরিচর্যায় দুদিনের মধ্যেই আলিফা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আলিফাকে ছাড়পত্রের সঙ্গে ফুলের তোড়া উপহার দিয়েছেন।তিনি বলেন, রোগীদের প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার কমতি নেই।সেবা নেওয়া রোগী মো. জমির হোসেন উপজেলার সিদলাই ইউনিয়নের পূর্ব পুমকারা এলাকার বাসিন্দা।
তিনি গত তিন দিন আগে জ্বর ও কাশি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার চিকিৎসক তাকে ছাড়পত্র দিয়েছেন। ছাড়পত্রের সঙ্গে তাকে দেওয়া হয়েছে ফুলের তোড়া। এতে তিনি সুস্থতার সুখ অনুভূতির পাশাপাশি ফুলেল শুভেচ্ছার কারণে পেয়েছেন মানসিক প্রশান্তিও।তিনি বলেন, চিকিৎসক ও সেবিকাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাদের নিবিড় চিকিৎসায় ও যত্নে আমি আরোগ্য লাভ করেছি। আরোগ্য লাভের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই যে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। এতে রোগীরা মানসিক শক্তি ফিরে পাচ্ছে এবং হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রতি রোগীদের আস্থা বাড়ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, রোগের যন্ত্রণা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। ভর্তি থাকা রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলে ছাড়পত্রের সঙ্গে তাদের দেওয়া হয় ফুলের তোড়া। সদ্য সুস্থ হওয়া রোগীদের মানসিক প্রশান্তি দিতেই এই উদ্যোগ।তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অনেকেরই অনীহা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায় না।
এ ধরনের ভুল ধ্যানধারণা থেকে উপজেলাবাসীকে বের করে আনতে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা নিতে এ ধরনের নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমরা চাই এই উপজেলার রোগীরা প্রাইভেট হাসপাতালে না গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিক। সেবা গ্রহীতাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একদল চিকিৎসক ও নার্স সর্বদা নিয়োজিত আছে।