জাতীয়

আতঙ্কের এক নাম জেনে নিন তার ক্ষমতার উৎস

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুরুত্বপূর্ণ শাখা রমনা বিভাগের এডিসি হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন হারুন-অর-রশীদ। মানুষ পিটিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছেন তিনি। পুলিশ যেখানে বারবার জনগণের বন্ধু হিসেবে নিজেদের কর্মকাণ্ড প্রচার করছিল, ঠিক যেন তার বিপরীত ছিলেন এডিসি হারুন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, আইনজীবী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে নিজের সহকর্মীকেও পেটাতে ছাড়েননি তিনি। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে থানায় ধরে নিয়ে বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় আবারও আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি।

এ ঘটনায় তাকে ডিএমপি থেকে বদলি করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) পাঠানো হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।জানা গেছে, গত শনিবার রাতে নিজের ব্যক্তিগত ক্ষোভ মেটাতে পুলিশ বাহিনী নিয়ে দুই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকে শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে যান এডিসি হারুন। দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ। সেখানে তাদের বেদম মারধর করেন তিনি।

একজনকে পিস্তলের বাঁট দিয়ে মেরে দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়। ঘটনা জানাজানির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন সংগঠন হারুনের বিচার চেয়ে বিবৃতি দেয়। তাকে মানসিক রোগী আখ্যা দিয়ে পুলিশ বাহিনী থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিও তোলেন অনেকে।nagad
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পেটানোর অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ডিএমপি। কমিটিকে আগামী দুদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, তদন্ত রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের পিটিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন এডিসি হারুন। আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের লাঠিপেটা ও অকথ্য ভাষায় গালাগালও করেন তিনি। ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন ডিএমপির কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তবে এত কিছুর পরও থেমে থাকেননি তিনি। এরপর চাকরির বয়সসীমা ৩৫-এর দাবিতে আন্দোলনকারীদের শাহবাগে পেটান তিনি। এর বাইরেও শাহবাগ থানার ভেতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আলোচনায় আসেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

ডিএমপি রমনা জোনের আওতায় রয়েছে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, হাইকোর্ট, প্রেস ক্লাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এসব জায়গায় বিভিন্ন সময় মিছিল, মানববন্ধন হয়। সেসব কর্মসূচিতে এডিসি হারুন যাওয়া মানেই একটি নতুন পেটানোর ঘটনার জন্ম। গত বছর ১৮ এপ্রিল ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের লক্ষ করে রাবার বুলেট ছোড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তখন গুলি শেষ হয়ে গেছে বলায় এক পুলিশ কনস্টেবলকে থাপ্পড় মারেন। এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে বাহিনীর ভেতরে এবং বাইরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন হারুন।

ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষের দিন হারুন দানবের মতো আচরণ করছিলেন। এতটাই উগ্র ছিলেন যে, কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছিলেন না। এত ঘটনার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার ফল হচ্ছে শাহবাগ থানায় দুই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতার ওপর বর্বর নির্যাতনের ঘটনা। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেহেদী হাসান শান্ত বলেন, হারুনের এই বর্বরতা এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

তার সর্বোচ্চ বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই প্রতিবাদ চলবে। অতি দ্রুত হারুনের গ্রেপ্তার চাই।ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি লিখেছেন, আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং শরীফ আহমেদ মুনিমের ওপর যে বর্বরতা চালানো হয়েছে তার কঠোর বিচার দ্রুত নিশ্চিত হোক।ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, আমার ছাত্রলীগের ছোট ভাইয়ের কেন এমন হলো, কী জন্য এমন হলো জানতে চাই। এটা কি মেনে নেওয়ার মতো ঘটনা!